দৃষ্টি বিভ্রম! একটানা দৌড়ের পর ‘রোবট’ দেখতে শুরু!

অস্ট্রেলিয়ার এক দুঃসাহসিক দৌড় প্রতিযোগিতায় এক জন মানুষের অবিরাম, একটানা তিন দিনের দৌড়ের কাহিনী সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ‘ডেলিরিয়াস ওয়েস্ট’ নামের এই ম্যারাথন দৌড়টি ছিল প্রায় ৩২০ কিলোমিটার দীর্ঘ।

উত্তর ক্লিফ থেকে শুরু করে আলবানি পর্যন্ত বিস্তৃত এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে দৌড়বিদদের শারীরিক ও মানসিক চরম পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। গত বছর অনুষ্ঠিত হওয়া এই প্রতিযোগিতায় এক জন অংশগ্রহণকারীর অভিজ্ঞতা নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।

দৌড়টি ছিল যেন এক অন্য জগৎ। বুধবার সকালে দৌড় শুরুর পর, ঘন বনভূমি, বালুকাময় উপকূল এবং পাহাড়ী পথ ধরে এগিয়ে চলেছিলেন প্রতিযোগীরা।

প্রথম দিকে সবাই দলবদ্ধভাবে দৌড়ালেও, সময় গড়ানোর সাথে সাথে টিকে থাকার লড়াইয়ে একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যান তারা। একটানা ১৮ ঘণ্টা দৌড়ের পর প্রথম বিশ্রাম কেন্দ্রে পৌঁছান ওই দৌড়বিদ।

কিন্তু শরীরে রাজ্যের ক্লান্তি নিয়েও ঘুম যেন আসছিল না। সামান্য বিশ্রাম আর কিছু মুখরোচক খাবার পরেই আবার যাত্রা শুরু।

দিনের আলো কমে আসতেই প্রকৃতির অন্য রূপ দেখা যেতে শুরু করে। গভীর রাতে চারিদিকের পরিবেশ যেন আরও গাঢ় হয়ে ওঠে।

ক্লান্ত শরীরে ধীরে ধীরে বিভ্রম দেখা দিতে শুরু করে। এক সময় তিনি পথের ধারে রোবট দেখতে শুরু করেন। টানা কয়েক দিন ধরে সামান্য বিশ্রাম আর কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার ফলস্বরূপ এমনটা হওয়া স্বাভাবিক বলেই জানান তিনি।

দিনের পর দিন অবিরাম ছুটে চলা যেন এক কঠিন পরীক্ষা। মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছিল, যেন এই দৌড় শেষ হওয়ার নয়। একটা সময় তিনি এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, নিজেকে নিয়ে দ্বিধায় ভুগতে শুরু করেন।

তিনি কি সত্যিই দৌড়াচ্ছেন, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এখানে এসেছেন? এই ধরনের পরিস্থিতিতে বিশ্রাম নেওয়াটা জরুরি ছিল, কিন্তু তিনি থামেননি।

অবশেষে, প্রায় ৬৯ ঘণ্টা পর, আলবানিতে দৌড় শেষ করেন তিনি। অসাধারণ মনোবল আর ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।

এই দৌড় ছিল তার নিজের সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানার এক সুযোগ। সীমাহীন শারীরিক কষ্টের মধ্যেও কিভাবে একজন মানুষ তার লক্ষ্যের দিকে অবিচল থাকতে পারে, এই দৌড় যেন তারই প্রমাণ।

তিনি বলেন, এই দৌড় তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে, মানুষ হিসেবে তিনি কতটা সক্ষম।

এই ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য কঠোর প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। দৌড়ের আগে তিনি সপ্তাহে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পথ দৌড়েছেন।

এই দীর্ঘ দৌড়ের জন্য তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন, যা তাকে এই কঠিন পথ পাড়ি দিতে সহায়তা করেছে। মানুষের ইচ্ছাশক্তি এবং অধ্যবসায়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, এই দৌড় আজও অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *