দাম বাড়ছে! শুল্কের কোপে ওয়ালমার্টের কোন কোন পণ্যের দামে প্রভাব?

বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা, প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তনের জেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে পারে। দেশটির অন্যতম বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্ট (Walmart) এরই মধ্যে সতর্ক করে দিয়েছে যে, শুল্কের কারণে তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে হতে পারে। এতে খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে খেলনা, ইলেকট্রনিকস এবং গৃহস্থালীর সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে চীন, কানাডা, ভারত, মেক্সিকো ও ভিয়েতনামের মতো দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। ওয়ালমার্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডগলাস ম্যাকমিলন জানিয়েছেন, শুল্কের এই বোঝা তাদের ব্যবসার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। ফলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে চীনের ওপর আরোপিত উচ্চ শুল্কের কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে।

ওয়ালমার্টের এই ঘোষণার পর ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, কম আয়ের মানুষজন সাধারণত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য এই ধরনের বৃহৎ বাজারে নির্ভর করে। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে তাদের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, শুল্কের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।

ওয়ালমার্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফল ও সবজির মতো খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। তাদের প্রধান উদ্বেগ হলো খাদ্য মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা। তাছাড়া, আসন্ন গ্রীষ্ম ও উৎসবের মরসুমে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে পারে। বিশেষ করে, চীন থেকে আমদানি করা খেলনা, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট এবং শিশুর ব্যবহারের জিনিসপত্রের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলনার বাজারে এর প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি হওয়া কিছু খেলনার দাম এরই মধ্যে বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি জনপ্রিয় পুতুলের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট ও গেমিং পণ্যের দামও বাড়তে পারে, যা ভোক্তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, এর প্রভাব কি শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে? নাকি বিশ্ব অর্থনীতিতেও এর ঢেউ লাগবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এর ফলে বিভিন্ন দেশের বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।

যদি আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বিবেচনা করি, তাহলে দেখা যায়, আমাদের দেশেও বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করা হয়। পোশাক, ইলেকট্রনিকস, খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। তাই, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের ফলে বিশ্ববাজারে যদি পণ্যের দাম বাড়ে, তবে তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে। বিশেষ করে, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি পেলে স্থানীয় বাজারেও তার প্রভাব দেখা যায়।

অতএব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বৃদ্ধির এই আশঙ্কা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি সতর্কবার্তা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন কিভাবে বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে, এটি তারই একটি উদাহরণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *