কাশ্মীরে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ: গ্রামবাসীর জীবনে নেমে আসা বিভীষিকা!

কাশ্মীরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ: সীমান্ত গ্রামগুলোতে বিপর্যস্ত জনজীবন।

জম্মু ও কাশ্মীর, যা বিতর্কিত একটি অঞ্চল, সেখানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রায়ই উত্তেজনা দেখা যায়। সম্প্রতি, এই অঞ্চলের কিছু গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর মধ্যে একটি হলো গিংগাল।

গিংগাল গ্রামটি উত্তর কাশ্মীরে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (LoC) কাছে অবস্থিত। এখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সীমান্তের ওপার থেকে হওয়া গোলাবর্ষণে তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

মোহাম্মদ ইউনুস খান নামের একজন গ্রামবাসী জানান, গোলাগুলি শুরু হলে ৪০ জনের বেশি মানুষ একটি গোয়ালঘরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। তারা জানান, ঘরগুলো পাথরের তৈরি হলেও, গোলার আঘাত থেকে বাঁচতে গোয়ালঘরকেই নিরাপদ মনে করেছিলেন তারা। সবাই ভয়ে ছিলেন, এই বুঝি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।

গোলাগুলির তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, শিশুরা পানির জন্য কান্নাকাটি করলেও, প্রাণের ভয়ে কেউ ঘরের বাইরে যেতে সাহস পায়নি। এমনকি ঘরের কাছে থাকা একটি পানির কল থেকে পানি আনতে পর্যন্ত তারা ভয় পাচ্ছিল।

আরেকজন গ্রামবাসী, মোহাম্মদ শাফি, জানান, তারা রাতের খাবার খাচ্ছিলেন, এমন সময় বিস্ফোরণের শব্দ হয়। এরপর তারা কোনোমতে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন এবং দেখেন তাদের রান্নাঘরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গিংগালের বেশিরভাগ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বারামুল্লা শহরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

সেখানেকার একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া এক নারী জানান, তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বাড়ির ছবি দেখেন, যেখানে গোলাগুলির কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে, দক্ষিণ কাশ্মীরের একটি পর্যটন কেন্দ্র, “পাহেলগাম”-এও একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত ২২শে এপ্রিল, এখানে জঙ্গিদের হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়।

এর ফলস্বরূপ, পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানকার দোকান ও হোটেলগুলো এখন প্রায় জনশূন্য।

সাধারণত মে মাসে পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত থাকা পাহেলগামের পরিবেশ এখন থমথমে।

গিংগালের অধিবাসীরা এখন শান্তির জন্য প্রার্থনা করছেন।

তাদের একটাই প্রশ্ন, এই সংঘর্ষ যদি চলতেই থাকে, তাহলে তারা কোথায় যাবেন? তাদের মতে, যারা যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা করে, তারা যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছুই জানে না।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *