স্পেনে চরম মানবিক বিপর্যয়! বিমানবন্দরের মেঝেতে আশ্রয়হীন মানুষ!

স্পেনের মাদ্রিদ বিমানবন্দরে বাড়ছে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা।

মাদ্রিদ, স্পেন – স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাড়ছে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা। একদিকে যখন উন্নত জীবনের আশায় মানুষজন বিরামহীনভাবে এই বিমানবন্দরে পা রাখছে, ঠিক তখনই সেখানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেনের ক্রমবর্ধমান আবাসন সংকটের কারণে, বিশেষ করে মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মতো শহরগুলোতে ভাড়ার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায়, অনেক মানুষ এখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ মাদ্রিদ-বারাজাস বিমানবন্দরের টার্মিনাল ৪-এ থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

৫৪ বছর বয়সী তেরেসা নামের একজন স্প্যানিশ-ইকুয়েডরীয় নারী, যিনি গত ছয় মাস ধরে বিমানবন্দরের টার্মিনালে থাকছেন, তিনি জানান, সকালে কাজের খোঁজে বের হন এবং রাতে সেখানেই ঘুমান। তার মতো আরও অনেকে, যাদের থাকার মতো কোনো জায়গা নেই, তারা বিমানবন্দরের মেঝেতেই রাতের আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছেন।

ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মাদ্রিদ-বারাজাস বিমানবন্দর ছিল ইউরোপের তৃতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। কিন্তু এখন সেখানে আশ্রয়হীন মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো হেলদোল নেই।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নতুন একটি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। জানা গেছে, খুব শীঘ্রই শুধুমাত্র টিকিট আছে এমন যাত্রীদের বিমানবন্দরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে এই নিয়ম কার্যকর হলে, আশ্রয়হীন মানুষগুলোর ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

তেরেসা জানান, তিনি নতুন এই নিয়মের বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি আশঙ্কা করছেন, যদি তাদের বিমানবন্দরে থাকতে না দেওয়া হয়, তাহলে হয়তো পার্কের বেঞ্চে বা অন্য কোনো খোলা জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে।

এই সংকট সমাধানে রাজনৈতিক মহলে চলছে দোষারোপের পালা। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকার একে অপরের উপর দায় চাপিয়ে যাচ্ছে। মাদ্রিদ সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে, তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি পরিকল্পনা তৈরির আবেদন জানিয়েছে, যাতে বিমানবন্দরের আশ্রয়হীন মানুষগুলোকে পুনর্বাসন করা যায়।

মাদ্রিদ সিটি কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র লুসিয়া মার্তিন জানান, তারা আশা করেছিলেন পরিবহন, স্বরাষ্ট্র, সমাজকল্যাণ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা একটি যৌথ বৈঠকে বসবেন, কিন্তু তারা তাতে রাজি হননি।

অন্যদিকে, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (AENA) মাদ্রিদ সিটি কাউন্সিলের উপর পর্যাপ্ত সাহায্য না করার অভিযোগ এনেছে। তাদের মতে, সিটি কাউন্সিলের এই বিষয়ে উদাসীনতা বিমানবন্দরের আশ্রয়হীন মানুষগুলোর প্রতি তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার প্রমাণ।

আশ্রয়হীনতার শিকার ৫৭ বছর বয়সী কলম্বিয়ার নাগরিক মার্তা সেসিলিয়া কার্দেনাস জানান, তিনি কয়েক মাস ধরে বিমানবন্দরে থাকছেন। তার কথায়, “মনে হয় যেন একটা চক্রের মধ্যে ঘুরছি।”

বিমানবন্দরে ঠিক কতজন মানুষ আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, এই সংখ্যা কয়েকশো হতে পারে।

তেরেসা জানান, তিনি আগে মাদ্রিদের একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন এবং বয়স্কদের দেখাশোনা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে তিনি একজন বয়স্ক মহিলার দেখাশোনা করে মাসে প্রায় ৪৫০ ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৪,০০০ টাকা) রোজগার করেন। এই সামান্য আয় দিয়ে তিনি একটি ছোট স্টোরেজ ভাড়া করেন, যেখানে তার কিছু জিনিসপত্র রাখা আছে। এছাড়াও, তিনি একটি জিম-এ যান, যেখানে তিনি গোসল করেন।

গত এক দশকে স্পেনে বাড়ির ভাড়াও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, তেরেসার মতো অসহায় মানুষগুলোর জন্য জীবন ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তেরেসা দ্রুত একটি কাজ খুঁজে বের করতে চান এবং বিমানবন্দরের জীবন থেকে মুক্তি পেতে চান।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *