**বাগদাদে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলন: গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাওয়ার সম্ভাবনা**
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আরব লীগের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন এবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদে শুরু হয়েছে। শনিবারের এই সম্মেলনে মূল আলোচনার বিষয় হতে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান এবং সেখানকার মানবিক সংকট।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবারের সম্মেলনে গাজা পরিস্থিতি প্রধান আলোচনার বিষয় হবে। কারণ সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের পরেই সেখানে যুদ্ধবিরতি এবং ত্রাণ সরবরাহ চালুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এরই মধ্যে বাগদাদে পৌঁছেছেন এবং সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অনেক উপসাগরীয় দেশগুলো এবারের সম্মেলনে মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজকেও এই সম্মেলনে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা করেছেন সানচেজ।
গত মার্চ মাসে, ইসরাইল গাজায় হামাস-এর সঙ্গে হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেয়। এরপর গাজায় আবারও ভয়াবহ হামলা শুরু হয় এবং খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রীর প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে করে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক এক বৈঠকে ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হোসেন জানান, তারা গাজার পুনর্গঠনের জন্য একটি প্রস্তাব সমর্থন করার চেষ্টা করবেন। মূলত, ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিকল্প হিসেবে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। ট্রাম্প এর আগে কাতার সফরকালে গাজাকে “স্বাধীন অঞ্চল” হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
এর আগে তিনি গাজাকে “মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা” বানানোর ঘোষণা দিলে আরব নেতারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেন।
গাজার জন্য আরব লীগের পরিকল্পনা হলো সেখানকার প্রায় ২৪ লক্ষ বাসিন্দাকে তাদের স্থান থেকে না সরিয়েই অঞ্চলটির পুনর্গঠন করা। গাজা ছাড়াও, সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়েও সম্মেলনে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
এছাড়াও, এবারের সম্মেলনে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান পারমাণবিক আলোচনা নিয়েও কথা হতে পারে। ইসরাইলের সম্ভাব্য সামরিক হামলা থেকে ইরানকে বাঁচাতে ট্রাম্প দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছেন।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প জানান, একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি তারা পৌঁছে গেছেন। তবে শুক্রবার তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ইরানিরা দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে খারাপ কিছু ঘটতে পারে।
দীর্ঘ সংঘাত ও অস্থিরতা পেরিয়ে ইরাক সম্প্রতি স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। দেশটির নেতারা মনে করেন, এই শীর্ষ সম্মেলন তাদের স্থিতিশীলতা প্রমাণ করার একটি সুযোগ।
আল জাজিরার হয়ে বাগদাদ থেকে সংবাদ পাঠিয়েছেন মাহমুদ আবদেলওয়াহেদ। তিনি জানান, এই সম্মেলন ইরাকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ২০১২ সালের পর এই প্রথম ইরাকে এই ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে আরব লীগের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা