এলোন মাস্ক বিদায়, ডগ-ই এগিয়ে, বাড়ছে কর্মী ছাঁটাই!

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কার্যক্রমে পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে গঠিত একটি বিশেষ বিভাগ ‘ডগ’-এর (DOGE) কার্যক্রম এখনো চলছে।

যদিও এর প্রধান উদ্যোক্তা, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক, এখন সরাসরি এর সঙ্গে যুক্ত নন।

এই বিভাগের কর্মীরা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে কর্মী ছাঁটাই, পুরনো পদ্ধতির পরিবর্তনে কাজ করছেন, এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডার তৈরি করছেন, যা অভিবাসন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে এবং সরকারি অর্থ পরিশোধে জালিয়াতি শনাক্ত করতে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই ‘ডগ’ বিভাগের কর্মীরা এখনো বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় কাজ করছেন, যাদের কেউ অস্থায়ী ভিত্তিতে, আবার কেউ দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে নিযুক্ত আছেন।

অনেকের পদও স্থায়ী কর্মীদের মতোই।

এই কার্যক্রমের ফলে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারে গত কয়েক মাসে ‘ডগ’-এর কার্যক্রম বেশ প্রভাব ফেলেছে।

ট্রাম্পের প্রথম ১০০ দিনে প্রায় ১ লক্ষ ২১ হাজার সরকারি কর্মীকে হয় ছাঁটাই করা হয়েছে, অথবা ছাঁটাইয়ের উদ্দেশ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এছাড়াও, সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও প্রকল্পের ওপরও এর প্রভাব পড়েছে।

যদিও ‘ডগ’-এর কার্যক্রম নিয়ে কিছু আইনি জটিলতা ও রাজনৈতিক বিতর্ক রয়েছে, তবে এর কাজ এখনো চলছে।

এই বিভাগের কর্মীরা বিভিন্ন ক্যাবিনেট সচিবের সঙ্গে কাজ করছেন।

কারো কারো মতে, ইলন মাস্কের অনুপস্থিতিতে ‘ডগ’-এর কাজ সম্ভবত আরও সহজে সম্পন্ন হতে পারবে।

এই বিভাগের মূল লক্ষ্য ছিল সরকারি কাজে অপচয়, জালিয়াতি ও দুর্নীতি কমানো।

তবে, মাস্কের প্রস্থান কর্মীদের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারে।

রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান রিচ ম্যাককর্মিক মনে করেন, সম্ভবত এর প্রচারের ধরন পাল্টাবে, কিন্তু কাজ একই রকম থাকবে।

শুরুতে, ‘ডগ’ ছিল ইলন মাস্কের মস্তিষ্কপ্রসূত একটি ধারণা, এবং এর কৌশলগত পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি হোয়াইট হাউসের কাছে একটি কনফারেন্স রুমে বসতেন এবং মাঝে মাঝে তার জন্য নির্ধারিত ছোট অফিসেও যেতেন।

কখনও কখনও তিনি হোয়াইট হাউসের লিংকন বেডরুমেও ঘুমাতেন।

তবে তার জীবনযাত্রা ও কাজের বিস্তারিত তথ্য গোপন রাখা হতো।

‘ডগ’-এর কর্মীরা দ্রুত কাজ করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতেন, অনেকটা সিলিকন ভ্যালির মতো।

তাদের বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় উপদেষ্টা, চিফ অফ স্টাফ এবং প্রধান তথ্য কর্মকর্তার মতো পদে দেখা গেছে।

এমনকি তারা একই সাথে একাধিক সংস্থায় কাজ করেছেন।

ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলার অস্থিরতা এবং তার কম সহযোগিতা মূলক আচরণের কারণে তিনি ট্রাম্পের সান্নিধ্যে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন।

মাস্ক এপ্রিল মাসে জানান যে তিনি ‘ডগ’ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন এবং টেসলার দিকে মনোযোগ দেবেন।

তবে তিনি এখনও সপ্তাহে এক বা দুই দিন সরকারি কাজে ব্যয় করার পরিকল্পনা করছেন।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, ‘ডগ’-এর মূল লক্ষ্য, অর্থাৎ অপচয়, জালিয়াতি ও দুর্নীতি কমানোর কাজ অব্যাহত থাকবে।

ফ্লোরিডার রিপাবলিকান প্রতিনিধি, অ্যারন বিন বলেন, ‘কাজের গতি এখনো রয়েছে।

কঠিন কাজটি তিনি করে দিয়েছেন।

এখন সম্ভবত বুস্টার আলাদা হওয়ার সময় এসেছে।

আমি মনে করি, এখনো প্রেসিডেন্টের কাছে তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।’

তবে, ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, মাস্কের এই পদক্ষেপ ‘ডগ’-এর কার্যক্রমকে ধীর করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি হিসাব পরীক্ষক সংস্থার প্রধান, জেনে ডোড্যারো বলেছেন, ‘এই বিভাগের কারণে ফেডারেল সরকারে অবৈধ পরিশোধ ও জালিয়াতি শনাক্ত করা সহজ হয়েছে।’

তবে, ‘ডগ’-এর কর্মীরা ফেডারেল কর্মী ছাঁটাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় অনেকের মধ্যে গভীর আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।

বর্তমানে, বিভিন্ন সংস্থাকে তাদের কর্মী ছাঁটাই এবং পুনর্গঠনের পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে, যা ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা রয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসন (Social Security Administration) -এর মতো সংস্থায় ‘ডগ’-এর কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

এখানে তারা ট্রাম্প ও মাস্কের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন।

এই বিভাগের কর্মীরা বর্তমানে তিনটি প্রকল্পের ওপর কাজ করছেন।

এর মধ্যে রয়েছে ‘আপনি কি জীবিত?’ প্রকল্প, যা নিশ্চিত করবে যে, একজন ব্যক্তি জীবিত আছেন কিনা, যাতে মৃতের নামে ভুল পেমেন্ট বন্ধ করা যায়।

এছাড়াও, সরাসরি জমা (Direct Deposit) তথ্য পরিবর্তন এবং নতুন দাবির ক্ষেত্রে জালিয়াতি শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *