কুখ্যাত ফ্রেড এবং রোজ ওয়েস্টের বীভৎসতা: শিশুদের জীবনে নেমে আসা বিভীষিকা।
ইংল্যান্ডের গ্লচেস্টারের ২৮ নম্বর ক্রমওয়েল স্ট্রিট—এই ঠিকানাটি একসময় পরিণত হয়েছিল এক বিভীষিকাময় স্থানে। কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার ফ্রেড ওয়েস্ট এবং তার স্ত্রী রোজ ওয়েস্ট তাদের বাড়িতে নারী ও শিশুদের ওপর মাসের পর মাস ধরে চালাতেন অকথ্য অত্যাচার।
তাদের শিকারদের মধ্যে ছিল তাদের নিজেদের সন্তানরাও। এই দম্পতির নৃশংসতা আজও সারা বিশ্বে আলোচনার বিষয়। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত একটি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে আবারও সামনে এসেছে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কাহিনি। আসুন, আজ আমরা জানার চেষ্টা করি, এই দম্পতির সন্তানদের বর্তমান অবস্থা কী?
ফ্রেড ওয়েস্ট এবং রোজ ওয়েস্ট-এর নৃশংসতার শিকার হয়েছিলেন অন্তত ১০ জন নারী ও শিশু। এমনকি, তাদের নিজেদের কয়েকজন সন্তানও তাদের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছিল।
ফ্রেড ও রোজের সন্তান ছিল—চার্মেইন, হিদার, আনা মারি, মে, তারা, লুইজ, রোজমেরি জুনিয়র, লুসিয়ানা, স্টিফেন এবং ব্যারি ওয়েস্ট। এদের মধ্যে চার্মেইন ও হিদারকে হত্যা করে তাদের মা-বাবা।
ফ্রেড ওয়েস্ট ছিলেন একজন ঠান্ডা মাথার খুনি। ১৯৪১ সালে ইংল্যান্ডের একটি খামারে জন্ম নেওয়া ফ্রেড ছোটবেলা থেকেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলে জানা যায়। পরবর্তীতে তিনি রোজ ওয়েস্টের সঙ্গে পরিচিত হন এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
রোজ নিজেও শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলে শোনা যায়। ১৯৬৯ সালে তাদের পরিচয় হয়, যখন রোজের বয়স ছিল ১৫ বছর। এরপর তারা একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন এবং ১৯৭২ সালে তাদের বিয়ে হয়।
ফ্রেড ও রোজের সন্তানেরা শৈশব থেকেই চরম নির্যাতনের শিকার হয়। ফ্রেডের প্রথম স্ত্রী ক্যাথরিনের গর্ভে জন্ম নেওয়া চার্মেইন ছিল ফ্রেডের প্রথম সন্তান। এরপর আনা মারি, হিদার, মে, ব্যারি ও স্টিফেন জন্ম নেয়।
রোজের আরও কয়েকটি সন্তান ছিল, যাদের জন্ম হয় রোজের অন্য সম্পর্ক থেকে। এই শিশুদের জীবনে নেমে আসে এক বিভীষিকাময় অধ্যায়।
১৯৯৪ সালে ফ্রেড ও রোজ ওয়েস্টকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ও শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। বিচারের অপেক্ষায় থাকা অবস্থাতেই ১৯৯৫ সালে ফ্রেড আত্মহত্যা করেন। রোজ ওয়েস্টকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং প্যারোলের আবেদনও তিনি প্রত্যাখ্যাত হন।
এই ঘটনার শিকার হওয়া শিশুদের মধ্যে অনেকেই এখন স্বাভাবিক জীবন যাপনের চেষ্টা করছেন। আনা মারি ওয়েস্ট তার ভাইবোনদের থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করছেন। জানা যায়, তিনি তার পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখেন না।
অপর সন্তান মে ওয়েস্ট, যিনি তার মায়ের অপকর্মের কথা জানতে পেরেছেন, তিনি ‘লাভ অ্যাজ অলওয়েজ, মাম এক্সএক্সএক্স’ নামে একটি বই লিখেছেন, যেখানে তিনি তার ভেতরের কষ্টের কথা প্রকাশ করেছেন। স্টিফেন ওয়েস্ট বর্তমানে বিবাহিত এবং তার দুটি সন্তান রয়েছে।
ব্যারি ওয়েস্ট ২০২০ সালে আত্মহত্যা করেন।
অন্যদিকে, যারা ঘটনার শিকার হয়েও বেঁচে গিয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের পরিচয় গোপন রেখেছেন এবং নতুন জীবন শুরু করেছেন। তারা এই ভয়াবহ স্মৃতি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছেন।
ফ্রেড ও রোজ ওয়েস্টের নৃশংসতা শিশুদের জীবনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে, যা সহজে সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। তাদের এই ঘটনা সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা, যা আমাদের শিশুদের প্রতি আরও বেশি সংবেদনশীল হতে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উৎসাহিত করে।
তথ্য সূত্র: পিপল