শিরোনাম: আট বছর পর স্ত্রীর ‘হত্যাকাণ্ডে’ পেনসিলভেনিয়ার এক ব্যক্তি গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পেনসিলভেনিয়ার একটি শহরতলীতে আট বছর আগে নিখোঁজ হওয়া এক নারীর ‘হত্যাকাণ্ডের’ অভিযোগে অবশেষে তার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্থানীয় সময় বুধবার (১৫ মে) এই গ্রেফতার হয়।
অভিযুক্ত অ্যালেন গোল্ডের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে প্রথম-ডিগ্রি হত্যা, মৃতদেহ সরিয়ে ফেলা, মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে ৪৩ বছর বয়সী আনা ম্যাসিজেউস্কা নামের ওই নারী হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন। এরপর থেকেই পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ছিলেন তার স্বামী অ্যালেন গোল্ড।
কিন্তু ঘটনার আট বছর পর, পর্যাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হলো।
আনার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার তদন্তে পুলিশ বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য খুঁজে পেয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ঘটনার কয়েক মাস আগে আনা তার বিবাহিত জীবন নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন।
তিনি বিবাহবিচ্ছেদের কথা ভাবছিলেন এবং এজন্য একটি ক্লাসেও যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়াও, তিনি তার বন্ধুদের কাছে জানিয়েছিলেন, তিনি তার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারছেন না।
তদন্তকারীরা আরও জানতে পারেন, আনা নিখোঁজ হওয়ার আগে তার বাবার জন্মদিনে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন, যা ছিলো অস্বাভাবিকভাবে ভেঙে যাওয়া ভাষায় লেখা। আনা পোল্যান্ডের নাগরিক হওয়ায়, এই ধরনের ভুল তার করার কথা নয়।
পরে, গোল্ডের বাড়ি থেকে গুগল ট্রান্সলেটের মাধ্যমে ওই বার্তার অনুবাদ করা কিছু কাগজ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও, ঘটনার কয়েক দিন পর আনাকে যেখানে শেষ দেখা গিয়েছিল, সেই এলাকার একটি পার্কিং লটে তার নীল রঙের গাড়ি খুঁজে পাওয়া যায়।
গাড়ির সিটগুলো আনা ম্যাসিজেউস্কার উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।
আনার নিখোঁজ হওয়ার পর, স্থানীয় কমিউনিটিতে তার সন্ধান চেয়ে পোস্টার লাগানো হয় এবং ব্যাপক অনুসন্ধান চালানো হয়। তার বন্ধু এবং সহকর্মীরা ‘ফাইন্ডিং আনা ম্যাসিজেউস্কা’ নামে একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করেন, যেখানে তারা আনাকে খুঁজে বের করার জন্য সকলের সাহায্য চেয়েছিলো।
এই ঘটনার তদন্তে জড়িত এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ঘটনার দিন গোল্ডকে যখন আনা হত্যার বিষয়ে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়, তখন তার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এমনকি তিনি কোনো প্রতিবাদও করেননি।
তদন্তকারীরা বলছেন, এই ধরনের নীরবতা এবং ঘটনার সঙ্গে সঙ্গতিহীনতা তাদের সন্দেহের কারণ।
আনার বন্ধু এবং সহকর্মীরা জানিয়েছেন, আনা ছিলেন খুবই কর্মঠ, খুঁতখুঁতে এবং দয়ালু একজন মানুষ। তিনি পেশায় ছিলেন একজন অ্যাকচুয়ারি এবং প্রায় ১৭ বছর ধরে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।
তারা আনাকে একজন নির্ভরযোগ্য এবং ভালো মনের মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তবে, এখনো পর্যন্ত আনা ম্যাসিজেউস্কার মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা বেশ কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পেনসিলভেনিয়ার জেলা অ্যাটর্নি ক্রিস ডি বারেনা-সারোবে জানিয়েছেন, “আমাদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যা গোল্ডের অপরাধ প্রমাণ করতে সহায়তা করবে।”
আনার পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে তার বাবা-মা, এই খবরে গভীরভাবে শোকাহত। আনার এক বন্ধু জানিয়েছেন, তারা এই মামলার রায় শোনার অপেক্ষায় আছেন।
আগামী ২৭শে মে এই মামলার প্রাথমিক শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন