পোল্যান্ডে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপট। আগামী রবিবার, সম্ভবত পোল্যান্ডের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এই নির্বাচনে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, যা কেবল পোল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচনের ফল ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
পোল্যান্ডে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণ হলো, বর্তমান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদার (Andrzej Duda) মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। পোল্যান্ডের সংবিধানে একজন প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ দুটি পাঁচ বছরের মেয়াদের জন্য দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
যেহেতু বর্তমান প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তাই নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে।
এই নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ক্ষমতাসীন সিভিক প্ল্যাটফর্মের (Civic Platform) প্রার্থী এবং বিরোধী দল ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির (Law and Justice – PiS) সমর্থনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে। পোল্যান্ডের রাজনৈতিক কাঠামোতে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বেশি থাকলেও, প্রেসিডেন্টের হাতেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা থাকে।
প্রেসিডেন্ট আইনসভা কর্তৃক গৃহীত কোনো বিলের ওপর ভেটো দিতে পারেন এবং সামরিক ও পররাষ্ট্র নীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।
নির্বাচনে প্রধান ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ, অভিবাসন, গর্ভপাতের অধিকার এবং দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। পোল্যান্ড ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে দেশটির পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বিপুল সংখ্যক ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।
তবে সম্প্রতি পোলিশ কৃষকদের প্রতিবাদের জেরে দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া, রাশিয়ার সম্ভাব্য হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীর মধ্যে কয়েকজনের সম্ভাবনা বেশি। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ওয়ারশ’র মেয়র রাফাল ট্রাসকোভস্কি (Rafał Trzaskowski), যিনি সিভিক প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত এবং প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের (Donald Tusk) মিত্র।
এছাড়াও, ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির সমর্থনপুষ্ট স্বতন্ত্র প্রার্থী মার্সিন নাভ্রোস্কি (Marcin Nawrocki)-র নাম উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আরও কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে ভোটারদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে এবং তাঁদের পোল্যান্ডের নাগরিক হতে হবে। নির্বাচনে প্রায় ২ কোটি ৯০ লাখ ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
যদি কোনো প্রার্থী প্রথম রাউন্ডে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পান, তাহলে তিনি সরাসরি বিজয়ী হবেন। অন্যথায়, শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য প্রকাশের জন্য পোল্যান্ডের ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর সাইবার সিকিউরিটি (NASK) জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু সন্দেহজনক বিজ্ঞাপন দেখা গেছে, যেগুলোর মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা হতে পারে।
পোল্যান্ডের এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পোল্যান্ডের নতুন প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্র নীতি কেমন হবে, সেদিকে সকলের দৃষ্টি থাকবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা