হঠাৎ সিরিয়া নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণায় তোলপাড়!

যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া নীতিতে আকস্মিক পরিবর্তন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে তোলপাড়।

ওয়াশিংটন, (আন্তর্জাতিক ডেস্ক) – সিরিয়ার ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আকস্মিক ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যে তার সফরের সময় নেওয়া এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এখন তোড়জোড় শুরু হয়েছে মার্কিন প্রশাসনের অন্দরে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই নীতি পরিবর্তনের ফলে পুরো অঞ্চলে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হতে পারে।

জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পথ খুঁজছিলেন। এমনকি সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত এক সময়ের জিহাদি নেতা আহমেদ আল-শারা’র সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগের প্রস্তুতিও চলছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণভাবে তুলে নেওয়ার ঘোষণা অনেক কর্মকর্তাকে অবাক করেছে।

আলোচনা প্রসঙ্গে অবগত একটি সূত্র জানিয়েছে, “প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত হুট করে নেওয়া হয়নি। কয়েক মাস ধরেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে ট্রাম্প কর্মীদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছেন।”

সিরিয়ায় এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর বাশার আল-আসাদের সরকারের পতন হয়। এরপর আল-শারা’র নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয়। সম্প্রতি, ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে বিশেষ ছাড়পত্র দেবে।

মার্কো রুবিও বলেন, “যদি আমরা যথেষ্ট উন্নতি করতে পারি, তাহলে আমরা আইনটি বাতিল করতে চাই। কারণ, নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে অর্থ লগ্নি করতে দ্বিধা বোধ করেন। তবে আমরা এখনো সেই পর্যায়ে যাইনি। এটা এখনই বলা সম্ভব নয়।”

বর্তমানে, মার্কিন প্রশাসন নিষেধাজ্ঞাগুলো নিয়ে একটি জটিল কারিগরি পর্যালোচনা করছে। এতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে। যদিও নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের ছাড় দেওয়ার যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে, তবে প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হবে।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার ব্যাখ্যা করেছেন, “আসন্ন সপ্তাহগুলোতে সম্ভবত ট্রেজারি বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থনীতির বৃহত্তর অংশে সহায়তা করার জন্য সাধারণ লাইসেন্স জারি করা হবে, যা দেশটির পুনর্গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

ট্রাম্পের এই ঘোষণার সময় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সহ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে, এই সিদ্ধান্তে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল ছিল ভিন্ন মতের।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এপ্রিল মাসে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, এর ফলে ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবরের মতো হামাস ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারে। তবে ট্রাম্প ইসরায়েলের আপত্তি আমলে নেননি।

ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শুক্রবার বলেন, “আমি মনে করেছি, এটি সঠিক কাজ।”

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পেছনে কয়েক মাস ধরে চলা আলোচনার কথা জানা গেছে। সিরিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একাধিক বৈঠক হয়েছে, যেখানে নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বৈঠকে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে এসেছিলেন সিরিয়ার অর্থমন্ত্রী আসাদ হাসান আল-শাইবানি। সেখানে তার সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের আলোচনা হয়। এর আগে নিউইয়র্কে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, প্যারিসে আল-শাইবানি এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি প্রাথমিক বৈঠক হয়, যেখানে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য কিছু শর্তের কথা বলা হয়। এর মধ্যে সন্ত্রাস দমনের সহযোগিতা এবং রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস করার মতো বিষয়গুলো ছিল।

এদিকে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য তদবির চালাতে সিরিয়ার প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গেও দেখা করেন। ‘ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্র্যাসি’র নির্বাহী পরিচালক জোনাথন শানজার জানিয়েছেন, তারা নতুন সরকারের ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এবং বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, এই সরকার আসাদ সরকারের মতো নয়।

তবে, পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা কংগ্রেসের সদস্যদের সিরিয়া সফরের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “নতুন সরকারের জন্য কিছুটা জায়গা তৈরি করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে আল-শারা’র সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে দ্বিধা ছিল।”

সাবেক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল, “একবার জিহাদি, সবসময় জিহাদি।”

অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত জোয়েল রেবার্ন বৃহস্পতিবার সিনেটে শুনানিতে ট্রাম্প ও রুবিওর সিরিয়া নীতি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সিনেটর জেন শাহীন আল-শারাকে হত্যার গুঞ্জন নিয়ে প্রশ্ন করলে রেবার্ন জানান, তিনি এমন কোনো প্রচেষ্টার কথা জানেন না।

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এই নীতি বাস্তবায়নের পথে অনেক জটিলতা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, সিরিয়ার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য দেশটির ওপর থেকে মার্কিন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা প্রয়োজন।

মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আল-শারা সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীতিগুলো মেনে চলতে রাজি হয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন, ইসরায়েলসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শান্তি স্থাপন এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের মতো বিষয়গুলো রয়েছে। সিরিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস করতেও সহায়তা করতে রাজি হয়েছে।

তবে মার্কো রুবিও সতর্ক করে বলেছেন, আল-শারা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে অনেক সময় লাগবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *