আমার মা আমাকে স্মার্টফোন দিতে রাজি নন। এটা কি ঠিক হচ্ছে?
বর্তমান যুগে ছেলে-মেয়েদের হাতে স্মার্টফোন থাকাটা যেন একটি স্বাভাবিক বিষয়। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখা, পড়াশোনা করা কিংবা বিনোদন – সব ক্ষেত্রেই স্মার্টফোন এখন অপরিহার্য। কিন্তু অনেক অভিভাবকই চান তাদের সন্তানেরা দেরিতে স্মার্টফোন ব্যবহার করা শুরু করুক।
সম্প্রতি, এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মনোবিদ ও সাংবাদিক।
ঢাকার একটি কিশোরীর ( বয়স আনুমানিক ১৩-১৪ বছর) মায়ের একই ধারণা। মেয়েটি চায় তার একটি স্মার্টফোন হোক, যাতে সে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করতে পারে।
কিন্তু তার মা এতে রাজি নন। মায়ের মতে, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে পড়াশোনায় ক্ষতি হতে পারে, সামাজিক জীবন ব্যাহত হতে পারে। এমনকি অনলাইনে খারাপ কিছু ঘটনার শিকার হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
মেয়েটির এই বিষয়ে মন খারাপ। সে মনে করে, বন্ধুদের সাথে সে পিছিয়ে পড়ছে, কারণ অন্যদের মতো তার কাছে স্মার্টফোন নেই। সে তার মায়ের এই সিদ্ধান্তের কারণ বুঝতে পারে না।
কিশোরীর বাবা অবশ্য মেয়ের স্মার্টফোন ব্যবহারের পক্ষে, তবে মায়ের কথার উপর তিনি কোনো কথা বলতে পারেন না।
এই পরিস্থিতিতে মনোবিদদের পরামর্শ হলো, মা ও মেয়ের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিত। উভয়কেই একে অপরের কথা শোনা এবং বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
কিশোরীকে বোঝাতে হবে, কেন মা তাকে এখনই স্মার্টফোন দিতে চাইছেন না। মায়েরও উচিত মেয়ের সামাজিক জীবন এবং বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মার্টফোন ব্যবহারের ভালো-মন্দ দুটো দিকই আছে। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মনোযোগ কমে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা, চোখের সমস্যা, এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যহানির মতো সমস্যা হতে পারে।
অন্যদিকে, স্মার্টফোন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এর মাধ্যমে পড়াশোনা, নতুন কিছু শেখা এবং বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখা সহজ হয়।
এই সমস্যার সমাধানে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে:
- আলোচনা: মা ও মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে হবে। কিশোরীকে তার ইচ্ছার কথা বলতে দিতে হবে এবং মায়ের উদ্বেগের কারণগুলোও শোনা উচিত।
- সময়সীমা নির্ধারণ: স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে। যেমন, পড়াশোনার পরে বা নির্দিষ্ট কিছু সময়ে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
- নজরদারি: মা-বাবা হিসেবে সন্তানের অনলাইন কার্যক্রমের উপর নজর রাখা প্রয়োজন। তারা কি দেখছে, কার সাথে কথা বলছে – সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
- অন্যান্য কার্যকলাপ: ছেলে-মেয়েকে খেলাধুলা, বই পড়া বা অন্য কোনো শখের প্রতি উৎসাহিত করতে হবে, যাতে তারা স্মার্টফোনের প্রতি কম আকৃষ্ট হয়।
সবশেষে, মনে রাখতে হবে, মা-বাবার মূল উদ্দেশ্য হলো সন্তানের ভালো করা। তাই, তাদের উচিত সন্তানের প্রয়োজনীয়তা এবং উদ্বেগের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। একইভাবে, কিশোরীরও উচিত তার মায়ের উদ্বেগকে সম্মান করা এবং তাদের মধ্যে একটি সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখা।
তথ্য সূত্র: