রুমানিয়ার নির্বাচনে ট্রাম্পপন্থী প্রার্থীর জয়, উদ্বিগ্ন বিশ্ব!

রোমানিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: একদিকে ট্রাম্পপন্থী, অন্যদিকে ইউরোপপন্থী প্রার্থীর লড়াই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্র রোমানিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এই নির্বাচনে একদিকে যেমন রয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক, যিনি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদানের বিরোধী, তেমনি আরেক দিকে আছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি সমর্থনকারী একজন মধ্যপন্থী প্রার্থী। এই নির্বাচন রোমানিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয় এবং রাত ৯টায় তা শেষ হয়। এই নির্বাচনের দ্বিতীয় রাউন্ডে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রথম রাউন্ডের ফলাফলে কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিক জর্জ সিমিয়ন জয়লাভ করেন, যিনি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদানের বিরোধী এবং ইইউ নেতৃত্বের কঠোর সমালোচক। তার এই জয়ের ফলে পশ্চিমা-সমর্থিত জোট সরকারের পতন হয় এবং এর ফলস্বরূপ মূলধন পাচারও বাড়ে।

ডিসেম্বরে দেশটির শীর্ষ আদালত প্রথম রাউন্ডের ফল বাতিল করে দেয়, যার কারণ হিসেবে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। আদালত কট্টরপন্থী প্রার্থী ক্যালিন জর্জেস্কুকেও অযোগ্য ঘোষণা করে।

এর ফলে ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত সিমিয়নের পথ আরও সুগম হয়। অন্যদিকে, বুখারেস্টের মেয়র নিকুসোর ডান একজন মধ্যপন্থী রাজনীতিবিদ, যিনি দুর্নীতি দমনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং ইইউ ও ন্যাটো’র প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।

তিনি মনে করেন, রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউক্রেনকে সমর্থন করা অত্যন্ত জরুরি। শুক্রবার প্রকাশিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ড্যান সামান্য ব্যবধানে সিমিয়নের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।

এই নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি এবং রোমানীয় প্রবাসীদের ভোটের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচন মূলত জাতীয়তাবাদী ও পপুলিজম এবং কেন্দ্রপন্থী আদর্শের মধ্যে একটি লড়াই।

আল জাজিরার প্রতিনিধি সোনিয়া গ্যালেগো বুখারেস্ট থেকে জানান, রোমানিয়া যেহেতু ইইউ এবং ন্যাটো’র সদস্য, তাই ইউক্রেনের সঙ্গে দেশটির দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যা ইইউর দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

এটি রোমানিয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, নির্বাচনের আগে অনলাইনে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এলেনা ক্যালিস্ট্রু আল জাজিরাকে জানান, “আমরা অনলাইনে যা দেখছি, তাতে অনেক ভুল তথ্য রয়েছে। সমন্বিতভাবে অনেক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এবং আমাদের নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে।” রোমানিয়ার প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অনেক।

তিনি প্রতিরক্ষা পরিষদের প্রধান, যিনি সামরিক সহায়তা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এছাড়াও, বৈদেশিক নীতির তদারকি এবং ইইউর কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ৬২ বছর বয়সী সরকারি কর্মচারী ড্যানিয়েলা প্লেসা চান এমন একজন প্রেসিডেন্ট, যিনি দেশের স্বার্থ রক্ষা করবেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দাবি নিয়ে অসন্তুষ্ট।

অন্যদিকে, ৩০ বছর বয়সী বিজ্ঞাপন কর্মী আন্দ্রেয়া নিকোলেস্কু চান, পরিস্থিতি শান্ত হোক এবং একজন ইউরোপপন্থী প্রেসিডেন্ট আসুক। নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হওয়া বিভিন্ন সমাবেশে কয়েক হাজার মানুষ তাঁদের ইইউ-পন্থী অবস্থানের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন।

আবার, গত বছরের নির্বাচনের ফল বাতিল এবং কট্টর ডানপন্থী প্রার্থী জর্জেস্কুকে অযোগ্য ঘোষণার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অনেকে বিক্ষোভ করেছেন। উল্লেখ্য, পোল্যান্ডেও একই দিনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম রাউন্ড অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে ইইউ-পন্থী ওয়ারশ মেয়র রাফাল ট্রাজকোওস্কি এবং রক্ষণশীল ইতিহাসবিদ ক্যারল নাওরোকির মধ্যে লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যদি সিমিয়ন অথবা ট্রাজকোওস্কি জয়লাভ করেন, তাহলে মধ্য ইউরোপে ইইউ-বিরোধী নেতাদের সংখ্যা আরও বাড়বে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *