অস্কার জয়ী অভিনেতা গ্যারি সিনিস, যিনি ‘ফরেস্ট গাম্প’-এ লেফটেন্যান্ট ড্যান চরিত্রে অভিনয় করে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছেন, অভিনয় জগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। এর কারণ, পরিবারের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা এবং কঠিন সময়ে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার।
গ্যারি সিনিসের অভিনয় জীবন কয়েক দশক ধরে বিস্তৃত। নব্বইয়ের দশকে ‘ফরেস্ট গাম্প’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। এরপর ‘অ্যাপোলো ১৩’ এবং ‘সিএসআই: নিউইয়র্ক’-এর মতো জনপ্রিয় সিনেমা ও টিভি সিরিজে তিনি কাজ করেছেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ‘লেফটেন্যান্ট ড্যান ব্যান্ড’-এর প্রধান হিসেবে সঙ্গীতচর্চাও করতেন। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন এবং এমি ও গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারও লাভ করেন। ২০১৭ সালে হলিউড ওয়াক অফ ফেম-এ তাঁর নামে একটি তারকাফলক স্থাপন করা হয়।
২০১৯ সালের পর থেকে গ্যারি সিনিসকে আর অভিনয়ে দেখা যায়নি। এর মূল কারণ ছিল তাঁর পরিবার। ২০১৮ সালে তাঁর স্ত্রী মোইরা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। একই সময়ে, তাঁদের ছেলে ম্যাক-এর বিরল ধরনের হাড়ের ক্যানসার (কর্ডোমা) ধরা পরে।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি পরিবারের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। ম্যাক-এর চিকিৎসার জন্য তিনি তাঁর অভিনয় জীবন থেকে বিরতি নেন এবং ছেলের “এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার” হয়ে ওঠেন।
ক্যানসারের সঙ্গে ম্যাকের দীর্ঘ লড়াই চলে। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তিনি পাঁচবার অস্ত্রোপচার করান। ধীরে ধীরে তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে এবং তিনি প্যারালাইজড হয়ে যান।
অবশেষে, অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৫ই জানুয়ারি, ম্যাকের জীবনাবসান হয়।
ছেলের মৃত্যুর পর গ্যারি সিনিস শোকাহত পরিবারকে সাহস যুগিয়েছেন। তিনি তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং কঠিন সময়ে তাঁদের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
ছেলের মৃত্যুর পর, গ্যারি সিনিস ম্যাকের সঙ্গীতচর্চার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ শুরু করেন। ম্যাক একজন সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন এবং তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পূর্ণ করার জন্য তিনি উদ্যোগ নেন।
ম্যাকের মৃত্যুর পর, সিনিস তাঁর কম্পিউটারে ছেলের আরও কিছু গান খুঁজে পান এবং সেগুলো নিয়ে দুটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন: ‘Resurrection & Revival: Parts 1 and 2’। এই অ্যালবাম থেকে পাওয়া অর্থ গ্যারি সিনিস ফাউন্ডেশনে দান করা হয়।
গ্যারি সিনিস শুধু একজন অভিনেতা নন, তিনি একজন সমাজসেবকও। ২০১১ সালে তিনি ‘গ্যারি সিনিস ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই ফাউন্ডেশন সামরিক বাহিনীর সদস্য, ভেটেরান, এবং প্রথম সারির কর্মীদের সহায়তা করে থাকে।
গ্যারি সিনিস মনে করেন, এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কাজ করা তাঁকে মানসিক শক্তি জুগিয়েছে এবং কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছে।
বর্তমানে গ্যারি সিনিস তাঁর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন এবং ন্যাশভিলে বসবাস করছেন। তিনি তাঁর নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসেন।
অভিনয় জগতে ফেরার বিষয়ে তিনি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গেই থাকতে চান।
গ্যারি সিনিসের এই আত্মত্যাগ এবং পরিবারের প্রতি ভালোবাসার গল্প, আমাদের সমাজের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: পিপল