শীর্ষে আরোহণের এক অভিনব প্রচেষ্টা: ৭ দিনে এভারেস্ট জয় করতে চান প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তারা।
বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার স্বপ্ন অনেকেরই। সাধারণত, এই অভিযানে ৬ থেকে ১০ সপ্তাহ সময় লাগে। তবে এবার একদল প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা অভিনব এক উপায়ে মাত্র এক সপ্তাহে এভারেস্ট জয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। তাদের এই দুঃসাহসিক পরিকল্পনার কথা এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক চার সদস্য – পাইলট, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা – এই অভিযানে নামছেন। তারা একটি ভেটেরান্স চ্যারিটির জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে চান। তাদের এই অভিযানের মূল আকর্ষণ হল, তারা অভিযানের আগে ‘জেনন’ নামক একটি বিশেষ গ্যাস গ্রহণ করবেন। তাদের দাবি, এই গ্যাস শরীরে অক্সিজেনের গ্রহণ যোগ্যতা বাড়িয়ে দ্রুত উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
অভিযানটি সফল হলে, এটি হবে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। তারা প্রথমে যুক্তরাজ্য থেকে কাঠমান্ডু যাবেন এবং সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে বেস ক্যাম্পে পৌঁছাবেন। এরপর কয়েকদিনের মধ্যেই তারা চূড়ায় আরোহণের চেষ্টা করবেন। তাদের এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এক সপ্তাহের কম সময় লাগবে।
তবে, তাদের এই পরিকল্পনা নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, জেনন গ্যাসের ব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তারা জানাচ্ছেন, জেনন গ্যাস মূলত একটি চেতনানাশক, যা মানুষের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। পর্বতারোহণের সময় এর ব্যবহার মারাত্মক হতে পারে। এছাড়া, ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইম্বিং অ্যান্ড মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশন (ইউআইএএ) জানিয়েছে, জেনন গ্যাসের মাধ্যমে পর্বতারোহণে পারদর্শিতা বাড়ে, এমন কোনো প্রমাণ নেই। বরং, এর অনুপযুক্ত ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে।
গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পিকক-এর মতে, জেনন গ্যাস তাৎক্ষণিকভাবে শরীরে ‘এরিথ্রোপোয়েটিন’ (EPO) হরমোনের উৎপাদন বাড়াতে পারে না, যা লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। এর জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে।
অভিযান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘ফুরটেনবাক অ্যাডভেঞ্চারস’-এর প্রধান লুকাস ফুরটেনবাক জানিয়েছেন, তিনি নিজে এর আগে আর্জেন্টিনায় ৬,৯৬১ মিটার উঁচু আকোনকাগুয়া শৃঙ্গে জেনন গ্যাসের পরীক্ষা করেছেন। যদিও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য জেনন গ্যাসের ব্যবহার কতটা কার্যকর, তা এখনো পরীক্ষিত নয়।
বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, অতিরিক্ত উচ্চতায় অক্সিজেনের অভাব এবং শারীরিক দুর্বলতার কারণে পর্বতারোহীরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েন। এর মধ্যে রয়েছে মস্তিষ্কে জল জমা (সেরিব্রাল এডিমা), ফুসফুসে জল জমা (পালমোনারি এডিমা) এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি।
তবে, এই দলের সদস্য আল কার্নস জানিয়েছেন, তারা ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত আছেন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। তাদের মতে, সামরিক জীবনের অভিজ্ঞতাই তাদের এই ঝুঁকি মোকাবিলায় সাহায্য করবে। তারা নিয়মিত হাইপক্সিক চেম্বারে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং বিশেষ ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরকে প্রস্তুত করছেন। কার্নস আরও জানান, তাদের এই অভিযান সফল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩০ শতাংশ, আর ২১ দিনের মধ্যে অভিযান সম্পন্ন করার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ।
এদিকে, এই ধরনের অভিযান বেশ ব্যয়বহুল। এর খরচ প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। ফুরটেনবাক মনে করেন, এই ধরনের অভিযান খুব সীমিত সংখ্যক মানুষের জন্যই প্রযোজ্য হবে।
এভারেস্ট জয় সব সময়ই দুঃসাহসিক অভিযান। তবে, অল্প সময়ে এভারেস্ট জয়ের এই চেষ্টা কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন