প্রসবের পর অনেক নারীর জীবনে নেমে আসে এক নীরব কষ্ট – শ্রোণী অঞ্চলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্থানচ্যুত হয়ে যাওয়া। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত না হওয়ায় অনেক সময় নারীরা মানসিক ও শারীরিক উভয় দিকেই ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এই সমস্যা নিয়ে সমাজে সচেতনতা বাড়ানো এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া জরুরি।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, শ্রোণী অঞ্চলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্থানচ্যুত হওয়াকে (Pelvic Organ Prolapse) বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। জরায়ু, মূত্রথলি, পায়ুপথ অথবা যোনিপথের কোনো অঙ্গ স্থানচ্যুত হয়ে যাওয়া এর অন্তর্ভুক্ত।
এর কারণে যোনিপথে চাপ অনুভব হতে পারে, যা অনেক ক্ষেত্রে অস্বস্তিকর। এমনকি, এর প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে।
কারও কারও ক্ষেত্রে, বিষয়টি বাইরে থেকে দৃশ্যমান হয়।
এই সমস্যা সমাধানে সচেতনতা জরুরি, কারণ অনেক নারীই জানেন না যে তাঁদের শরীরে এমন কিছু ঘটছে। অনেকে আবার রোগ সম্পর্কে অবগত থাকলেও প্রতিকারের উপায় খুঁজে পান না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যার মূল কারণ হতে পারে সন্তান প্রসব। এছাড়াও আঘাত, মেনোপজ, বয়স এবং অজানা কারণেও এমনটা হতে পারে।
এর কিছু সাধারণ উপসর্গ হলো— প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে সমস্যা, যা দৈনন্দিন জীবনকে কঠিন করে তোলে। অনেক সময়, সামান্য হাঁটাচলার সময়ও প্রস্রাব ঝরে পড়তে পারে।
এছাড়াও, যৌনমিলনে ব্যথা অনুভব হওয়া, তলপেটে চাপ লাগা, এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যাটি চিহ্নিত করতে পারেন। স্থানচ্যুতির মাত্রা এবং প্রকারভেদে চিকিৎসার ভিন্নতা রয়েছে।
কারও কারও ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। আবার, কিছু ক্ষেত্রে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, এই সমস্যার সমাধানে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা যেতে পারে। যেমন—
- নিয়মিত ব্যায়াম করা, যা শ্রোণী অঞ্চলের পেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, কারণ অতিরিক্ত ওজনের কারণে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য এড়িয়ে চলা, যা শ্রোণী অঞ্চলের উপর চাপ কমাতে সহায়ক।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
মানসিক স্বাস্থ্যও এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকেই এই সমস্যায় হতাশ হয়ে পড়েন।
তাই, পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের কাছ থেকে মানসিক সমর্থন পাওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজনে, মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
আমাদের সমাজে এখনো অনেক নারী এই সমস্যা নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
মনে রাখতে হবে, শ্রোণী অঞ্চলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্থানচ্যুতির সমস্যা নারীদের একার নয়। সচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা এবং মানসিক সমর্থন—এই তিনটি বিষয়ই এই সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান