আতঙ্কে নাবিকেরা! ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে বন্ধ হতে পারে সমুদ্রের তথ্য সংগ্রহ!

যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, যা আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও নৌ-চলাচলের জন্য অত্যাবশ্যকীয়, তার তহবিল বন্ধ করার প্রস্তাব উঠেছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বাজেট প্রস্তাবনায় এই পর্যবেক্ষন ব্যবস্থাটির আঞ্চলিক কার্যক্রমের জন্য ফেডারেল তহবিল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে সমুদ্র বিষয়ক তথ্য সংগ্রহে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

এই পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, যা ‘ইন্টিগ্রেটেড ওশেন অবজার্ভিং সিস্টেম’ (আইওওএস) নামে পরিচিত, প্রায় ২০ বছর আগে চালু হয়। এটি মূলত ১১টি আঞ্চলিক সংস্থার একটি নেটওয়ার্ক, যা বিভিন্ন রাজ্যের সমুদ্র এবং উপকূলীয় অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহ করে। হাওয়াইয়ের একজন পাইলট ক্যাপ্টেন এড ইনোসের মতে, গভীর সমুদ্রে জাহাজ নিরাপদে চালানোর জন্য এই ডেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে জাহাজের গতিপথ নির্ধারণ থেকে শুরু করে জরুরি উদ্ধার অভিযান—সবকিছুতেই এই তথ্য কাজে লাগে।

প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, এই ব্যবস্থাটির জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ৪ কোটি ৩৫ লক্ষ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি) ফেডারেল তহবিল বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে হারিকেন এবং সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। শুধু তাই নয়, বাণিজ্যিক মৎস্যজীবীদের জন্য ক্ষতিকর শৈবালের বিস্তার এবং মাছ ধরার উপযুক্ত স্থান চিহ্নিত করতেও সমস্যা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডের মতো সামরিক বাহিনীও এই ডেটার ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া, আবহাওয়ার পূর্বাভাস তৈরিতেও এই তথ্য ব্যবহার করা হয়। স্থানীয় সরকারগুলো তাদের ওয়েবসাইটে রিয়েল-টাইম উপকূলীয় তথ্য আপলোড করে, যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে।

এই ধরনের তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের গুরুত্ব বাংলাদেশের জন্য অনেক। আমাদের বিশাল উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়মিত ঘটে। তাই, সমুদ্র বিষয়ক নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ এবং তার বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা দুর্যোগ মোকাবিলা আরও কার্যকর করতে পারি। এই প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্রের এই বাজেট প্রস্তাবনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া দরকার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এই বাজেট প্রস্তাব কার্যকর হয়, তবে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিশাল শূন্যতা তৈরি হবে। দীর্ঘদিনের তৈরি হওয়া অংশীদারিত্বগুলো ভেঙে যাবে এবং তথ্য একটি জায়গায় পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এই অবস্থায়, স্থানীয় সংস্থাগুলো হয়তো তথ্য সংগ্রহ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে, কিন্তু তাদের পক্ষে সব কাজ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী দেশগুলোর জন্য সমুদ্র বিষয়ক তথ্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নিজেদের উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী সমুদ্র পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা করবে এবং সমুদ্র সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *