পোপ লিও চতুর্দশ: বিশ্ব শান্তির প্রতীক হিসেবে ক্যাথলিক চার্চকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার
ভ্যাটিকান সিটি, ১৯শে মে, ২০২৫: রবিবার সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পোপ লিও চতুর্দশ তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, ধর্মগুরু এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
পোপ লিও, যিনি ইতিহাসে প্রথম মার্কিন পোপ, তাঁর ভাষণে একতাবদ্ধ হয়ে ক্যাথলিক চার্চকে বিশ্ব শান্তির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরার অঙ্গীকার করেন।
পোপের অভিষেক অনুষ্ঠানে ছিল এক বিশেষ আবহ। ঐতিহ্যবাহী পোপমোবাইল চড়ে তিনি জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা হাতে অনেককে উল্লাস করতে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানে পেরু ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদেরও উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পোপের মাথায় যখন আনুষ্ঠানিক ‘প্যালিয়াম’ (lambswool stole) এবং তাঁর আঙুলে ‘ফিশারম্যান্স রিং’ পরানো হয়, তখন তাঁর চোখে-মুখে গভীর ভাব ফুটে ওঠে, যেন ১.৪ বিলিয়ন সদস্যের এই বিশাল চার্চের নেতৃত্ব দেওয়ার গুরুভার তিনি অনুভব করছেন।
অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে পোপ লিও জানান, তিনি ভালোবাসার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ একটি চার্চ গড়তে চান, যা বিশ্বে শান্তির বার্তা দেবে। তিনি বলেন, “আমি চাই, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হোক একটি ঐক্যবদ্ধ চার্চ তৈরি করা, যা সংহতি ও মিলনের প্রতীক হবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে সাহায্য করবে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আজও আমরা সমাজে ঘৃণা, সহিংসতা, বিদ্বেষ, ভিন্নতার ভয় এবং পৃথিবীর সম্পদ শোষণকারী একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে অনেক বিভেদ দেখতে পাই।
পোপের এই আহ্বান বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথলিক চার্চের মধ্যে বিভেদ দেখা গিয়েছিল। নতুন পোপের আগমনকে রক্ষণশীল ক্যাথলিকরা স্বাগত জানিয়েছেন, কারণ তাঁরা মনে করেন, তাঁর ঐতিহ্যপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল দৃষ্টিভঙ্গি চার্চকে আরও শক্তিশালী করবে।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স সহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এছাড়া, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
পোপ লিও তাঁর ভাষণে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনা এবং গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। তিনি গাজার শিশুদের জন্য প্রার্থনা করেন, যাদের দুর্ভিক্ষের শিকার হতে হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে একজন, শিকাগোতে জন্ম নেওয়া সুসান হ্যানসেন বলেন, “পোপের ঐক্যের বার্তা যুক্তরাষ্ট্র এবং সারা বিশ্বে অনুরণিত হবে।” ওমাহা, নেব্রাস্কার ২১ বছর বয়সী সেমিনারিয়ান ইথান মেনিং বলেন, “একজন আমেরিকান হিসেবে এখানে এসে, পিটার্সের সিংহাসনে আমাদের একজনকে দেখতে পাওয়া যীশুর আরও কাছে অনুভব করার মতো।
পোপের অভিষেক অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যপূর্ণ প্রতীকগুলোর ব্যবহার ছিল। ‘প্যালিয়াম’ (lambswool stole) হলো একজন পালকের প্রতীক, যিনি তাঁর ভেড়ার পালকে রক্ষা করেন।
‘ফিশারম্যান্স রিং’ যিশুর সেই আহ্বানকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যেখানে তিনি তাঁর শিষ্য পিটারকে মাছ ধরার জাল ফেলতে বলেছিলেন।
পোপ লিও চতুর্দশ-এর অভিষেক অনুষ্ঠানে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা ছিল সুস্পষ্ট। তাঁর এই নতুন যাত্রা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।