হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালায় লুকিয়ে থাকা একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা আসলে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ!
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ল’ স্কুলের সংগ্রহে থাকা একটি নথিপত্র নিয়ে সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ১৯৪৬ সালে মাত্র ২৭.৫০ ডলারে কেনা একটি নথিপত্র আদতে আসল ‘ম্যাগনা কার্টা’র একটি কপি, যা এখন মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের। খবরটি শুনে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।
ঐতিহাসিক এই আবিষ্কারের পেছনে রয়েছেন কিং’স কলেজ লন্ডনের মধ্যযুগীয় ইতিহাসের অধ্যাপক ডেভিড কার্পেন্টার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত নথিগুলো যাচাই করার সময় তার নজরে আসে এই বিশেষ দলিলটি। অধ্যাপক কার্পেন্টারের মতে, তিনি শুধু একটি বিরল দলিলই খুঁজে পাননি, বরং বিশ্ব সাংবিধানিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আবিষ্কার করেছেন। তার মতে, এতদিন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিল না।
‘ম্যাগনা কার্টা’ মূলত ত্রয়োদশ শতকে ইংল্যান্ডের রাজা জন কর্তৃক জারিকৃত একটি সনদ। এই সনদের মূল বিষয় ছিল রাজার ক্ষমতাকে সীমিত করা এবং আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা করা। ১২১৫ সালে প্রথম এটি প্রকাশিত হয়। এই ঐতিহাসিক দলিলটি পশ্চিমা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল হিসেবে বিবেচিত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধান তৈরিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
জানা যায়, রাজা জনের সময়কালের মূল ‘ম্যাগনা কার্টা’র মাত্র চারটি এবং ১৩০০ সালে রাজা প্রথম এডওয়ার্ডের জারি করা সংস্করণের ৬টি কপি বর্তমানে বিদ্যমান। হার্ভার্ডে পাওয়া নথিটি ১৩০০ সালের সংস্করণগুলোর সঙ্গে হুবহু মিলে যায় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
নথিটির সত্যতা যাচাই করার জন্য অধ্যাপক কার্পেন্টার ব্রিটেনের ইস্ট অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিকোলাস ভিনসেন্টের সঙ্গে কাজ করেন। তারা বিদ্যমান ৬টি আসল কপির সঙ্গে এর আকার এবং লেখার ধরন মিলিয়ে দেখেন। অতিবেগুনি রশ্মি এবং স্পেকট্রাল ইমেজিং-এর মাধ্যমে তারা সূক্ষ্ম বিষয়গুলোও পরীক্ষা করেন। অধ্যাপক কার্পেন্টার বলেন, “প্রতিটি শব্দ খুঁটিয়ে দেখার পর আমি নিশ্চিত হয়েছি যে এটি অন্য ৬টির মতোই।”
এই দলিলের বর্তমান মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক কার্পেন্টার বিবিসিকে জানান, “আমি এখনই এর মূল্য বলতে পারছি না, তবে ২০০৭ সালে নিউইয়র্কে নিলামে ১৩০০ সালের একটি ‘ম্যাগনা কার্টা’ ২ কোটি ১০ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। সে হিসেবে এর মূল্য অনেক বেশি হবে।”
হার্ভার্ড ল’ স্কুলের গ্রন্থাগার ও তথ্য পরিষেবা বিভাগের সহকারী ডিন আমান্ডা ওয়াটসন অধ্যাপক কার্পেন্টার এবং অধ্যাপক ভিনসেন্টের এই আবিষ্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এ ধরনের আবিষ্কার প্রমাণ করে, কিভাবে মূল্যবান সংগ্রহগুলো উজ্জ্বল গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত করা হলে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়।”
তথ্য সূত্র: পিপল।