শিরোনাম: কলেজ জীবন ত্যাগ করে, তরুণীর ছয় অংকের বেতনের চাকরি: এক নতুন দিগন্তের সূচনা
সাধারণত, আমরা একটি নির্দিষ্ট পথে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখি। পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটি চাকরি, কিংবা ব্যবসা—এটাই যেন সমাজের প্রচলিত ধারা।
কিন্তু সবার পথ তো এক নয়। আমেরিকার বাসিন্দা, ২৫ বছর বয়সী অ্যালেগ্রা ম্যাককেনা, তেমনই একজন, যিনি প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে নিজের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি করেছেন।
চার বছরের একটি কলেজ জীবন ত্যাগ করে, তিনি এখন একজন সফল কোর্ট রিপোর্টার, এবং প্রথম বছরেই ছয় অংকের বেশি আয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছেন।
স্কুল জীবন শেষ করার পর, অ্যালেগ্রা একটি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু খুব দ্রুতই তিনি বুঝতে পারেন, এই পথটি তার জন্য নয়।
২০১৯ সালের দিকে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন এবং স্থানীয় একটি কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হন। এর পাশাপাশি তিনি নিউজিল্যান্ডে একজন ‘অ-পেয়ার’ (au pair) হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
কিন্তু এর পরেই আসে সেই কঠিন সময়—কোভিড-১৯ মহামারী। এই পরিস্থিতিতে অ্যালেগ্রাকে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হয়।
সৌভাগ্যক্রমে, ২০২০ সালের গ্রীষ্মকালে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে কোর্ট রিপোর্টিং পেশা সম্পর্কে জানতে পারেন তিনি। বন্ধুটির মা ছিলেন একজন ফ্রিল্যান্স রিপোর্টার, যিনি এই পেশাটির ব্যাপারে বেশ উৎসাহী ছিলেন।
অ্যালেগ্রা টাইপ করার ক্ষেত্রে ভালো ছিলেন, তাই বন্ধুটি তাকে এই পেশাটি বেছে নিতে উৎসাহিত করেন। অ্যালেগ্রা দ্রুত ন্যাশনাল কোর্ট রিপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন-এর একটি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে নাম লেখান।
এরপর একটি স্টেনোগ্রাফি মেশিন ভাড়া করে, তিনি পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করেন।
অ্যালেগ্রা জানান, প্রথম ক্লাস করার পরই তিনি অনুভব করেন, এই পেশাটি যেন তার জন্য সঠিক। তিনি বলেন, “আমি এতে এতটাই আগ্রহী ছিলাম যে, আরও বেশি কিছু শিখতে চাইতাম, এই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে চেয়েছিলাম।
অন্য কোনো বিষয় শিখতে গিয়ে যা আমার মধ্যে ছিল না।”
কোর্ট রিপোর্টিংয়ের প্রশিক্ষণ সাধারণত দুই থেকে চার বছর পর্যন্ত চলে। অ্যালেগ্রা প্রায় তিন বছর পড়াশোনা করেন, পাশাপাশি একটি ইন্টার্নশিপ করেন এবং রাতে স্টেনোগ্রাফির অনুশীলন করতেন।
অবশেষে, ২০২৫ সালের শুরুতে তিনি তার রাজ্যের সুপিরিয়র কোর্টে একটি স্থায়ী চাকরি পান, যেখানে তিনি এর আগে, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কাজ করছিলেন।
কোর্ট রিপোর্টার হতে গেলে প্রথমে স্টেনোগ্রাফি তত্ত্ব শিখতে হয়। এরপর শব্দ তৈরি এবং দ্রুত লেখার ওপর জোর দিতে হয়।
অ্যালেগ্রা ব্যাখ্যা করেন, “সহজ কথায়, আমাদের সংক্ষেপে ডিকশনারির প্রতিটি ইংরেজি শব্দ নতুন করে শিখতে হয়। স্টেনোগ্রাফিতে শব্দ, বাক্য বা পুরো ধারণা বোঝানোর জন্য বিশেষ চিহ্ন, রেখা বা সংকেত ব্যবহার করা হয়।”
এই পেশায় সফল হতে হলে মিনিটে ২২৫টি শব্দ লিখতে পারার দক্ষতা থাকতে হয়, এবং তা ৯৫ শতাংশ নির্ভুল হতে হয়।
অ্যালেগ্রা আরও বলেন, “নিয়মগুলো শিখে গেলে, বিষয়টি সহজ হয়ে যায়, যা আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে শব্দ তৈরি করতে সাহায্য করে।”
কোর্ট রিপোর্টার হিসেবে কাজ করা সহজ নয়। কারণ, আদালতের সময়সূচী সব সময় এক রকম থাকে না। মামলার শুনানির সময় পরিবর্তন হতে পারে, এমনকি বাতিলও হয়ে যেতে পারে।
অ্যালেগ্রা বলেন, “দিনের পরিকল্পনা করা কঠিন হতে পারে, যখন আপনি ভাবেন আপনার কাছে ট্রানস্ক্রিপ্ট তৈরির জন্য চার ঘণ্টা সময় আছে, কিন্তু বাস্তবে সেখানে মাত্র ৩০ মিনিট পাওয়া যায়।”
একজন কোর্ট রিপোর্টারকে নিরপেক্ষ থাকতে হয়। আদালতের শুনানির সময় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো বা কোনো ধরনের আবেগ প্রকাশ করা উচিত না।
অ্যালেগ্রা বলেন, “আবেগ দেখালে মনে হতে পারে আপনি একটি নির্দিষ্ট পক্ষের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছেন, যা ট্রানস্ক্রিপ্ট তৈরির ক্ষেত্রে সন্দেহ তৈরি করতে পারে।”
বর্তমানে, অ্যালেগ্রা প্রতিদিন সকালে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আদালতে যান। সেখানে তিনি দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলার শুনানি শোনেন, যা সরাসরি অথবা অনলাইনে হতে পারে।
আদালতের কাজ শেষে তিনি ট্রানস্ক্রিপ্ট তৈরির কাজ করেন। একজন রিপোর্টার সাধারণত প্রতি সপ্তাহে বিচারকদের সঙ্গে কাজ করেন এবং মাসের মধ্যে প্রায় একটি ট্রায়ালে অংশ নেন, যা সাধারণত দুই থেকে চার দিন স্থায়ী হয়।
অ্যালেগ্রা মনে করেন, এই পেশা অত্যন্ত মূল্যবান, যা সবাই পারে না।
তিনি জানান, ২০১৯ সালে ন্যাশনাল কোর্ট রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এই কোর্সের মাঝপথে ঝরে যায়।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আমাদের ওপর নির্ভর করা হয়, আমাদের সম্মান করা হয় এবং আমরা সম্ভবত সেই কক্ষে থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে একজন।”
ভবিষ্যতে অ্যালেগ্রা ফেডারেল কোর্টে কাজ করতে চান অথবা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন।
তবে, তিনি অন্তত ১০ বছর তার বর্তমান পদে থাকার পরিকল্পনা করছেন, যাতে তিনি সুযোগ-সুবিধা এবং পেনশন পান।
তিনি তার কাজের সময় এবং অসুস্থতাকালীন ছুটিকেও বেশ গুরুত্ব দেন, যা সাধারণত ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সহজলভ্য নয়।
অ্যালেগ্রা জানান, প্রশিক্ষণের ছয় মাস পর থেকেই তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করছেন এবং প্রথম বছরেই একটি ছয় অংকের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি টাকার কাছাকাছি) বেশি আয়ের পথে রয়েছেন।
অ্যালেগ্রা বলেন, “এই পেশায় ভালো অর্থ উপার্জন করা সম্ভব, তবে তা সহজে আসে না।
আমাকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে এবং দিনের শেষে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। তবে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, আমি কখনোই কোনো ট্রানস্ক্রিপ্ট তৈরি করে, পারিশ্রমিক পাওয়ার পর মনে করিনি যে কাজটি আমার জন্য উপযুক্ত ছিল না।”
তথ্য সূত্র: পিপল