শিরোনাম: আমেরিকার একটি ছোট শহরের রন্ধনসম্পদের জাদু: বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষা?
ছোট্ট একটি শহর, কিন্তু তার খাদ্যভাণ্ডারের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। আমেরিকার মেইন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ড শহরটি যেন রন্ধনশিল্পের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানকার স্থানীয় উপকরণ, সৃজনশীল শেফ এবং খাদ্যপ্রেমীদের মিলিত প্রয়াসে শহরটি খাদ্যরসিকদের কাছে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
কক্সবাজারের যেমন সুনাম রয়েছে তার সামুদ্রিক খাবারের জন্য, তেমনই পোর্টল্যান্ডও পরিচিত তার তাজা, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাবারের জন্য।
পোর্টল্যান্ডের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে স্থানীয় চাষী ও মৎস্যজীবীদের নিরলস প্রচেষ্টা। অ্যামি গেইরোর মতো তরুণ উদ্যোক্তারা, যারা নটি সিস্টার্স সি ফার্মে কাজ করেন, তাদের কথায় সেই ছবিটা আরও স্পষ্ট হয়।
অ্যামি ও তাঁর দুই বোন মিলে এখানে ঝিনুক চাষ করেন, যা পোর্টল্যান্ডের অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোতে পরিবেশন করা হয়। মজার বিষয় হল, অ্যামি নিজে যদিও খাদ্যগুণে ভরপুর ঝিনুক ভালোবাসেন, কিন্তু তাঁর অ্যালার্জি রয়েছে এই সামুদ্রিক খাবারে!
পোর্টল্যান্ডের খাদ্য বিপ্লবের অন্যতম কারিগর হলেন স্যাম হেইওয়ার্ড। তিনি ১৯৯৬ সালে ফোর স্ট্রিট রেস্তোরাঁ খোলেন এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্য ব্যবহারের ধারণা জনপ্রিয় করেন।
তাঁর রেস্তোরাঁয় পরিবেশিত হয় কাঠের আগুনে রান্না করা মেইন অঞ্চলের মাংস, টার্নিপ সবজি এবং মৌসুমি ফল ও সবজি। স্যাম মনে করেন, এই শহরের খাদ্য সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হল স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীদের সঙ্গে তাঁদের পারস্পরিক বোঝাপড়া।
পোর্টল্যান্ডের খাদ্য বাজারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এর বৈচিত্র্য। এখানে যেমন রয়েছে ঐতিহ্যবাহী “জে’স ওয়েস্টার” এর মতো পুরনো সি-ফুড জয়েন্ট, তেমনই রয়েছে “দ্য হলি ডোনাট”-এর মতো জনপ্রিয় জায়গা, যেখানে আলু দিয়ে তৈরি নানা স্বাদের (যেমন বেকন, চেডার, এবং হুইস্কি ককটেল-এর স্বাদযুক্ত) ডোনাট পাওয়া যায়।
পোর্টল্যান্ডের খাদ্যভাণ্ডারের অন্যতম আকর্ষণ হল “হারবার ফিশ মার্কেট”। এখানে তাজা মাছ, ঝিনুক ও অন্যান্য সামুদ্রিক খাবারের পসরা সাজানো থাকে। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও এই বাজারটি খুব পছন্দের।
এখানকার “নটি সিস্টার্স” এর ঝিনুকগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পোর্টল্যান্ডের খাদ্য সংস্কৃতির সর্বশেষ সংযোজন হল “মি. টুনা” নামের সুশি রেস্তোরাঁ। এখানে আটলান্টিক ব্লুফিন টুনা মাছের সশিমির মতো বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়।
রেস্তোরাঁর মালিক ও শেফ জর্ডান রুবিন মনে করেন, পোর্টল্যান্ডের খাদ্য সংস্কৃতির বিশেষত্ব হল এখানে প্রতিটি রেস্তোরাঁ স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়, যা একটি শক্তিশালী কমিউনিটি তৈরি করে।
পোর্টল্যান্ডের এই খাদ্য বিপ্লব বাংলাদেশের খাদ্য সংস্কৃতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে। আমাদের দেশেও স্থানীয় কৃষকদের উৎসাহিত করা এবং তাজা, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্য ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া যেতে পারে।
এর মাধ্যমে একদিকে যেমন স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হবে, তেমনই ভোক্তারাও স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবারের স্বাদ নিতে পারবে।
পোর্টল্যান্ডের এই গল্প প্রমাণ করে, একটি শহরের খাদ্য সংস্কৃতি কেবল রেস্তোরাঁ বা খাবারের দোকানগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং স্থানীয় কৃষক, মৎস্যজীবী এবং খাদ্যপ্রেমীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। এটি একটি শহরকে কীভাবে খাদ্যরসিকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক