শিরোনাম: অক্ষমতা জয় করে টার্নার পুরস্কারের জন্য মনোনীত, শিল্পী নেনে কালুর এক অসাধারণ যাত্রা
শিল্পকলার জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন নাইজেরীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ শিল্পী নেনে কালু। সম্প্রতি, তিনি মর্যাদাপূর্ণ টার্নার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন, এবং এর মাধ্যমেই ইতিহাসে নিজের নাম লিখিয়েছেন।
কারণ, তিনিই প্রথম কোনো বিশেষভাবে সক্ষম শিল্পী যিনি এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেন। তাঁর এই স্বীকৃতি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, বরং বিশ্বজুড়ে শিল্পের জগতে ভিন্নতা এবং অন্তর্ভুক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
১৯৬৬ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে জন্ম নেওয়া নেনে কালু অল্প বয়সেই লন্ডনে চলে আসেন। তাঁর বেড়ে ওঠা ওয়ান্ডসওয়ার্থে, যেখানে তিনি এখনো একটি বিশেষ সাহায্য কেন্দ্রে থাকেন।
অটিজম সহ নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, শিল্পকলার প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা তাঁকে পরিচিতি এনে দিয়েছে। ১৯৮০-র দশকে স্থানীয় একটি ডে-কেয়ার সেন্টারে তাঁর শিল্পচর্চা শুরু হয়, এবং পরবর্তীতে অ্যাকশনস্পেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি নিয়মিতভাবে কাজ করতে শুরু করেন।
অ্যাকশনস্পেস বিশেষভাবে সক্ষম শিল্পীদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল, যেখানে তাঁরা নিজেদের সৃজনশীলতাকে বিকশিত করার সুযোগ পান।
নেনে কালুর শিল্পকর্ম একদিকে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনই গভীর। তাঁর ক্যানভাসে ফুটে ওঠে উজ্জ্বল রঙের সমাহার, যেখানে তিনি বৃত্তাকার আকারের মোটিফ ব্যবহার করেন।
তাঁর কাজগুলি দর্শকদের মধ্যে এক ধরনের সম্মোহন তৈরি করে। এছাড়া, নেনে তৈরি করেন বিশাল আকারের ত্রিমাত্রিক শিল্পকর্ম, যেখানে কাপড় এবং পুরনো ভিডিও টেপ-এর মতো উপকরণ ব্যবহার করা হয়।
তাঁর এই সৃষ্টিশীলতা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। গত বছর বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত ‘Manifesta 15’ নামক একটি আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনীতে তাঁর কাজগুলি ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়, যা টার্নার পুরস্কারের বিচারকদেরও নজর কাড়ে।
নেনে কালুর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে তাঁর সহযোগী শিল্পী এবং অ্যাকশনস্পেসের কর্মীবৃন্দের নিরলস প্রচেষ্টা। তাঁদের সহযোগিতায় নেনে তাঁর শৈল্পিক ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছেন।
তাঁর কাজের ধরন এবং শৈলী অন্যদের থেকে এতটাই আলাদা যে, অ্যাকশনস্পেস কর্তৃপক্ষ সব সময়ই চেয়েছেন তাঁকে একজন সমসাময়িক শিল্পী হিসেবে পরিচিত করতে, কোনো ‘প্রতিবন্ধী শিল্পী’ হিসেবে নয়।
নেনে কালুর এই মনোনয়ন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিল্পের জগতে ভিন্নতা এবং অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। তাঁর কাজের মাধ্যমে, বিশেষভাবে সক্ষম শিল্পীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়তা করবে।
তাঁর এই জয়, অন্যদেরও নিজেদের স্বপ্ন পূরণে উৎসাহিত করবে।
নেনে কালুর গল্প, শুধু একটি পুরস্কারের গল্প নয়, এটি একটি সংগ্রামের গল্প, যা প্রমাণ করে—অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে, সব বাধা পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাঁর এই স্বীকৃতি, শিল্পের জগতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যেখানে সকলের জন্য স্থান রয়েছে, যেখানে প্রতিবন্ধকতা জয় করে মানুষ সাফল্যের শিখরে পৌঁছতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান