শিরোনাম: শোক আর অভিনয়: ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির মুখোমুখি অভিনেতা টিম রথ
প্রায় এক উজ্জ্বল সকালে, আয়ারল্যান্ডের গ্যালওয়ে শহরে বসে অভিনেতা টিম রথ-এর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল।
তাঁর নতুন ছবি ‘পয়জন’ মুক্তি পেতে চলেছে, যেখানে শোকের গভীরতা এবং ভালোবাসার গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই ছবির প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়ার কিছু পরেই রথের জীবনে নেমে আসে এক গভীর শোকের ছায়া।
তাঁর ২৫ বছর বয়সী ছেলে করম্যাক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, যা রথের জীবনকে নতুন করে নাড়া দিয়ে যায়।
কথা বলতে গিয়ে রথ জানালেন, অভিনয় জীবন নিয়ে তাঁর ধারণা এখন অনেক বদলেছে।
একসময় এই পেশাকে তিনি দুঃস্বপ্নের সঙ্গে তুলনা করতেন, কিন্তু এখন তিনি এটিকে ভালোবাসেন।
‘পয়জন’ ছবিতে শোকের যে চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, রথের ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে যেন তার গভীর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবির শুটিংয়ের সময়েই তিনি জানতে পারেন তাঁর ছেলের অসুস্থতার কথা।
ছবিটি একজন বাবার শোক এবং সেই শোকের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার এক কঠিন যাত্রার গল্প।
ডাচ লেখক লট ভেকমানস-এর একটি নাটকের ওপর ভিত্তি করে এই ছবি তৈরি হয়েছে।
ছবিতে রথের বিপরীতে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী ট্রাইন ডাইরহোম।
ছবিতে দেখা যায়, এক দম্পতি তাঁদের ছেলের মৃত্যুর দশ বছর পর আবার মিলিত হন, যখন একটি সমাধিস্থলে বিষাক্ত পদার্থ ফেলার কারণে ছেলের দেহ কবর থেকে তোলার প্রয়োজন হয়।
২০২২ সালের অক্টোবরে, ছবির শুটিং শেষ হওয়ার কয়েক মাস পরেই করম্যাকের মৃত্যু হয়।
করম্যাক ছিলেন একজন গিটারবাদক ও সুরকার।
রথ জানান, শুটিংয়ের সময় তিনি চেষ্টা করেছিলেন ইতিবাচক থাকতে, কারণ তখনো তাঁর ছেলে তাঁদের সঙ্গে ছিল।
করম্যাকের উৎসাহেই তিনি ছবিটির কাজ চালিয়ে যান।
রথের ভাষায়, ‘আমার মনে হয়, ও চেয়েছিল আমি যেন বাড়ির বাইরে যাই।’
‘পয়জন’ ছবিতে শোক প্রকাশের বিভিন্ন ধরন তুলে ধরা হয়েছে।
রথ মনে করেন, শোক প্রকাশের পদ্ধতি মানুষের আঙুলের ছাপের মতোই আলাদা।
তাঁর বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরাও এই শোকের সঙ্গে বিভিন্নভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন।
ছবিটি বানানোর সময় পরিচালক ডেজিরি নোসবুশ-কে রথ তাঁর ছেলের অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন।
নোসবুশ নিজেও তাঁর ছেলের অসুস্থতা নিয়ে কঠিন সময় পার করেছেন, তাই তিনি রথকে তাঁর মতো করে সময় কাটানোর সুযোগ করে দেন।
ছেলের মৃত্যুর পর রথ, তাঁর স্ত্রী নিকি বাটলর এবং তাঁদের আরেক ছেলে হান্টার এক বিবৃতিতে জানান, শোক যেন এক বিশাল ঢেউয়ের মতো এসেছিল।
তাঁরা করম্যাকের একটি কথা উল্লেখ করেন: ‘যা ভালোবাসো, তাই করো।’
অভিনয়কে ভালোবেসে টিম রথ তাঁর এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়েছেন।
ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল এবং তিনি বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে কাজ করেছেন।
তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আর্ট হাউস সিনেমা থেকে শুরু করে ব্লকবাস্টার ছবিতেও দেখা গেছে।
রথের মতে, কিছু কাজ থাকে যা কেবল ‘ভাড়া’ মেটানোর জন্য করতে হয়, আবার কিছু কাজ থাকে আত্মতৃপ্তির জন্য।
তিনি যদিও তাঁর করা কিছু ‘খারাপ’ কাজের কথা স্বীকার করেন, তবে সেগুলোর অভিজ্ঞতা থেকেও অনেক কিছু শিখেছেন বলে জানান।
রাজনৈতিক প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রথ বর্তমান বিশ্বের অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিশেষ করে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থান নিয়ে তিনি চিন্তিত।
তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের নীতি ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।
পেশাগত জীবনের বাইরে রথের ব্যক্তিগত জীবনও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
লস অ্যাঞ্জেলেসের তাঁর বাড়ির কাছে দাবানল লেগেছিল, তবে তাঁরা সৌভাগ্যক্রমে রক্ষা পান।
সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, রথ ইউরোপে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছেন না।
কারণ তাঁর সন্তানরা সেখানেই বড় হয়েছে এবং তাঁর কাছে জায়গাটি বিশেষ কিছু স্মৃতি বহন করে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান