বিশ্বের সেরা সৈকত? পর্তুগালের গোপনীয়তা ফাঁস!

পর্তুগালের অনাবিষ্কৃত উপকূল: বাংলাদেশী পরিবারের জন্য এক শান্তিময় গন্তব্য।

আজকের দিনে, বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করার প্রবণতা বাড়ছে, এবং বাংলাদেশের মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। পরিবার নিয়ে সুন্দর একটি ছুটি কাটানোর জন্য যদি ইউরোপের কোনো শান্ত ও সুন্দর জায়গা খুঁজে থাকেন, তাহলে পর্তুগালের ভিসেন্টাইন উপকূল আপনার জন্য আদর্শ হতে পারে। কোলাহলমুক্ত সমুদ্র সৈকত, সবুজ বনানী, আকর্ষণীয় কটেজ এবং স্থানীয় সংস্কৃতির মিশ্রণে এই জায়গাটি অন্যরকম।

পর্তুগালের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত ভিসেন্টাইন উপকূল, আলগার্ভ এবং অ্যালেজেন্তোর জনাকীর্ণ শহরগুলির থেকে একটু দূরে অবস্থিত। এখানকার শান্ত সমুদ্রসৈকতগুলি পরিবার এবং শিশুদের জন্য খুবই নিরাপদ। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্যও অসাধারণ। এখানকার সমুদ্রগুলি পরিষ্কার, বালুকাময় সৈকত, পাথুরে পাহাড় এবং উঁচু টিলার দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের প্রধান আকর্ষণ হল ভিসেন্টাইন কোস্ট ন্যাচারাল পার্ক। এই পার্কের কারণে এখানে উন্নয়নের নামে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হয়নি, যা একে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

এই উপকূলের একটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হল ‘প্রাইয়া দে মঁতে ক্লেরিগো’। এখানে পরিষ্কার নীল জলরাশি, সোনালী বালি এবং শান্ত পরিবেশ যেকোনো ভ্রমণকারীর মন জয় করে নেয়। এছাড়াও, এখানকার আশেপাশে রয়েছে ছোট ছোট গ্রাম, যেখানে স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা উপভোগ করা যায়। এখানকার স্থানীয় বাজারগুলোতে তাজা খাবার এবং স্থানীয় হস্তশিল্প পাওয়া যায়।

ভিসেন্টাইন উপকূলের একটি চমৎকার আবাসস্থল হল ‘মুক্সিমা’ (Muxima) নামক একটি পরিবার-চালিত বিএন্ডবি (Bed and Breakfast)। এটি ‘প্রাইয়া দে মঁতে ক্লেরিগো’ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই বিএন্ডবি-টি একটি ঐতিহ্যপূর্ণ পর্তুগিজ স্থাপত্যের উদাহরণ। এখানে পরিবারের সবাই মিলে প্রকৃতির কাছাকাছি শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশে থাকতে পারে।

মুক্সিমার সাতটি ঘর রয়েছে, প্রত্যেকটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে একটি প্রাকৃতিক সুইমিং পুলও রয়েছে, যা শিশুদের খুব প্রিয়।

ভিসেন্টাইন উপকূলের আশেপাশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য অনেক সুন্দর জায়গা রয়েছে। আপনি এখানকার আকর্ষণীয় সমুদ্রসৈকতে সানবাথিং করতে পারেন অথবা সমুদ্রের ধারে হেঁটে বেড়াতে পারেন। কাছাকাছি ‘প্রাইয়া দা আরিফানা’ (Praia da Arrifana) একটি জনপ্রিয় স্থান, যেখানে বডি বোর্ডিং এবং সার্ফিং করার সুযোগ রয়েছে।

যারা ট্রেকিং ভালোবাসেন, তাদের জন্য ‘প্রাইয়া দা আমোরেইরা’ (Praia da Amoreira)-এর চার মাইলের একটি সুন্দর পথ রয়েছে। এছাড়াও, পর্তুগালের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ‘ফারোল দো কাবো দে সাও ভিসেন্তে’ (Farol do Cabo de São Vicente)-এ গিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের বিশালতা উপভোগ করা যেতে পারে।

যারা সার্ফিং ভালোবাসেন, তাদের জন্য এখানে সার্ফিং শেখারও ব্যবস্থা রয়েছে। লাগোসের কাছে ‘সোল অ্যান্ড সার্ফ’ (Soul & Surf) নামক একটি সার্ফিং স্কুল রয়েছে, যেখানে প্রশিক্ষকরা বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে সার্ফিং প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

এই অঞ্চলের খাবারের স্বাদও অসাধারণ। এখানে তাজা সামুদ্রিক খাবার, যেমন – ‘ক্যাটাপ্লানা দে মারিসকো’ (cataplana de marisco) বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও, আলজেজুরে ‘আর্টে বিয়াঙ্কা’ (Arte Bianca)-এর পিৎজা খুবই সুস্বাদু।

ভিসেন্টাইন উপকূল ভ্রমণের আগে কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার। পর্তুগালে যেতে ভিসার প্রয়োজন হবে, তাই যাত্রা শুরুর আগে ভিসার জন্য আবেদন করুন। এছাড়াও, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন।

খরচের হিসাব:

মুক্সিমার একটি ফ্যামিলি স্যুইটের (family suite) ভাড়া প্রতি রাতে প্রায় ২২০ ইউরো (ইউরোর বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী – ২০২৩ সালের অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ২৫,০০০ টাকার মতো)। সার্ফিং প্রশিক্ষণের জন্য জনপ্রতি প্রায় ৬০ ইউরো (প্রায় ৬,৮০০ টাকা)।

এই জায়গাটি বাংলাদেশের ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে। যারা কোলাহলমুক্ত পরিবেশে প্রকৃতির কাছাকাছি ছুটি কাটাতে চান, তাদের জন্য পর্তুগালের ভিসেন্টাইন উপকূল একটি আদর্শ স্থান।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *