যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হলো ‘গোল্ডেন ডোম’ বা ‘সোনালী গম্বুজ’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
এর লক্ষ্য হলো, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করা।
তবে এই প্রকল্পের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে কয়েক’শ বিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পেন্টাগন বা মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর ইতোমধ্যেই হোয়াইট হাউসের কাছে এই প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছে।
খুব শীঘ্রই ট্রাম্প তাঁর পছন্দের পরিকল্পনা এবং ব্যয়ের পরিমাণ ঘোষণা করতে পারেন।
এই ঘোষণার মাধ্যমেই আগামী কয়েক বছরে মহাকাশ-ভিত্তিক এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির পথ খুলে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্পটি মোটেই সস্তা হবে না।
আগামী বছরের প্রতিরক্ষা বাজেটে এই প্রকল্পের জন্য ২৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে।
তবে কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের (Congressional Budget Office) ধারণা, এই ‘সোনালী গম্বুজ’ তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্রকে ২০ বছরে সম্ভবত ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করতে হতে পারে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে, বিভিন্ন বেসরকারি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পোয়াবারো হবে।
কারণ, সরকার একাই এটি তৈরি করতে পারবে না।
এক্ষেত্রে এলন মাস্কের ‘স্পেসএক্স’-এর মতো কোম্পানিগুলো লাভজনক চুক্তি পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র এবং সিনিয়র উপদেষ্টা শন পার্নেল এক বিবৃতিতে জানান, “যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের মাতৃভূমিকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি থেকে রক্ষা করতে প্রতিরক্ষা দপ্তর ‘গোল্ডেন ডোম’ ব্যবস্থার একটি খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করেছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “প্রতিরক্ষা সচিব এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং আমরা খুব শীঘ্রই এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে ঘোষণা দিতে প্রস্তুত।”
এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো, একজন প্রোগ্রাম ম্যানেজার নিয়োগ করা, যিনি এই অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পরিচালনা তদারকি করবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, জেনারেল মাইকেল এ. গুয়েটলেইন-কে এই দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
গুয়েটলেইন বর্তমানে মার্কিন স্পেস ফোর্সের ভাইস চিফ অব স্পেস অপারেশনস-এর দায়িত্বে আছেন।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং মহাকাশ-ভিত্তিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা রয়েছে।
তবে ‘গোল্ডেন ডোম’ নিয়ে এখনো অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে।
এই ব্যবস্থাটির প্রকৃত রূপ কেমন হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১০০টি প্রোগ্রাম অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এর মধ্যে অনেকগুলো এরই মধ্যে প্রতিরক্ষা বিভাগের অধীনে রয়েছে অথবা উন্নয়নের পর্যায়ে আছে।
তবে এর সবচেয়ে নতুন দিকটি হলো, এই প্রকল্পের কমান্ড ও কন্ট্রোল ব্যবস্থা।
এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা করছে, কিন্তু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং বিশাল খরচের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
ট্রাম্প প্রায়ই ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’-এর মতো একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।
তবে, দুটি ব্যবস্থার মধ্যে প্রযুক্তিগত পার্থক্য অনেক।
উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ ছোট আকারের ক্ষেপণাস্ত্র থেকে দেশটির জনবহুল এলাকাকে রক্ষা করে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প চান এমন একটি মহাকাশ-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা পুরো যুক্তরাষ্ট্রকে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি ‘গোল্ডেন ডোম ফর আমেরিকা’ শীর্ষক একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়েছে, চীন, রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার মতো দেশেরা বিভিন্ন ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, বোমারু বিমান এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপর আঘাত হানতে পারে।
এই প্রকল্পের মূল সিদ্ধান্ত মূলত আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM) বা হাইপারসনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে, তার ওপর নির্ভর করবে।
এক্ষেত্রে ব্যাপক গবেষণা ও উন্নয়নের প্রয়োজন হবে।
এই জটিল ব্যবস্থা তৈরি করতে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি ঠিকাদারদের সমন্বয়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে।
তবে এখনো পর্যন্ত এর কাঠামো স্পষ্ট নয়।
‘স্পেসএক্স’ ছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি কোম্পানি এই প্রকল্পের অংশীদার হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
প্রকল্পের সম্ভাব্য খরচ নিয়ে বিতর্ক চললেও, ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ২০২৬ সালের নতুন বাজেট তৈরির সময় ‘গোল্ডেন ডোম’-এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছে।
তবে, প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু বিলম্ব হয়েছে।
ট্রাম্প চেয়েছিলেন, প্রতিরক্ষা সচিবকে ২৮ মার্চের মধ্যে এই প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি পরিকল্পনা জমা দিতে হবে।
কিন্তু হোয়াইট হাউস সেই পরিকল্পনাটি পায় নির্ধারিত সময়সীমার প্রায় এক মাস পরে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘গোল্ডেন ডোম’ তৈরি হতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে, দ্রুত এই প্রকল্পের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করা যায় কিনা, সে বিষয়ে নজর দিতে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন