মার্কিন ঋণমান কমতেই বিশ্ববাজারে আতঙ্ক! শেয়ার বাজারে ধস?

আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমানোর ফলে শেয়ার বাজারে দরপতন।

আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মুডি’স রেটিং-এর তরফে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমানোর ঘোষণার পরেই বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে দরপতন শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি, মার্কিন ডলারের দামও কমেছে। খবর অনুযায়ী, চীনের অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ হওয়ার পরেই এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

মুডি’স রেটিং এজেন্সি যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা দেশটির ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা সামাল দিতে না পারাকে দায়ী করেছে। এই ঘোষণার পরেই বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি সরিয়ে নিতে শুরু করেন, যার ফলস্বরূপ শেয়ার বাজারে বড় ধরনের পতন দেখা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের S&P 500 সূচক ১.২ শতাংশ কমেছে। ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ০.৮ শতাংশ এবং অন্যান্য সূচকও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। ডলারের বিনিময় মূল্য জাপানি ইয়েনের বিপরীতে কমেছে, যেখানে ইউরোর দাম বেড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ঝুঁকছেন।

ইউরোপের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। জার্মানির DAX সূচক ০.১ শতাংশ এবং ফ্রান্সের CAC 40 সূচক ০.৫ শতাংশ কমেছে। ব্রিটেনের FTSE 100 সূচকও ০.৫ শতাংশ কমেছে।

চীনের অর্থনীতিতেও মন্দাভাব দেখা যাচ্ছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে চীনের খুচরা বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.১ শতাংশ বেড়েছে, যা পূর্বাভাসের চেয়ে কম। শিল্প উৎপাদনও কমেছে, যা দেশটির অর্থনীতির দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ব্যবসার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের প্রবণতা বাড়ছে বলেও জানা গেছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ০.১ শতাংশ এবং সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স সামান্য কমেছে।

জাপানের শেয়ার বাজারেও দরপতন হয়েছে। টোকিওর নিক্কেই ২২৫ সূচক ০.৭ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি সূচক ০.৯ শতাংশ কমেছে। এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ার S&P/ASX 200 এবং তাইওয়ানের Taiex সূচকেও পতন হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ঋণমান কমানোর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। এর কারণ, মার্কিন অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাই, এর দুর্বলতা বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের উপর প্রভাব ফেলে।

এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা, সেদিকে এখন সবার নজর। যদি সুদের হার কমানো হয়, তবে তা অর্থনীতির জন্য কিছুটা স্বস্তি আনতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তেলের বাজারেও অস্থিরতা দেখা গেছে। সোমবার সকালে, মার্কিন বেঞ্চমার্ক অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি প্রায় ৬১.৫০ ডলারে নেমে আসে। আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুড প্রতি ব্যারেল প্রায় ৬৪.৯১ ডলারে লেনদেন হয়েছে।

শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে, তা এখন দেখার বিষয়। বিশেষ করে, মার্কিন ডলারের দরপতন হলে আমদানি খরচ বাড়তে পারে। আবার, বিশ্ব বাজারের এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি বাজারেও প্রভাব পড়তে পারে। এই বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করছেন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *