আতঙ্কের কারণ? বার্ড ফ্লু নিয়ে নতুন তথ্য, মানুষের শরীরে সংক্রমণ বন্ধ!

বার্ড ফ্লু নিয়ে সতর্কতা: যুক্তরাষ্ট্রে মানবদেহে সংক্রমণ কমে আসায় বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক মাস ধরে বার্ড ফ্লু বা পাখি ফ্লু’র সংক্রমণ কমে এসেছে, তবে এর কারণ নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। সাধারণত হাঁস-মুরগি ও অন্যান্য পাখির মধ্যে এই ভাইরাস দেখা যায়। সম্প্রতি খামারের শ্রমিক ও গরুর মধ্যে এর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল।

যদিও আক্রান্তদের বেশিরভাগের অসুস্থতা মৃদু ছিল, তারপরও এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা চলছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC) জানিয়েছে, সর্বশেষ ফেব্রুয়ারির শুরুতে নেভাডা, ওহাইও এবং ওয়াইওমিং-এ বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে। এর আগে, গত ১৪ মাসে প্রায় ৭০ জন মানুষের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে।

এদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল, তবে সেখানেও পরীক্ষার সংখ্যা কমে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের হার কমে আসার পেছনে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। শীতকালে পাখির স্থানান্তরের কারণে সাধারণত এই রোগ বাড়ে, তাই এটিকে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

তবে, অনেকের ধারণা, সরকারের নজরদারি কমে যাওয়া, অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে পরীক্ষা করানোর ভীতি এবং আক্রান্তদের শনাক্ত করতে না পারার কারণে সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।

আমরা এখনো জানি না কেন নতুন করে সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে না।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির প্যানডেমিক সেন্টারের পরিচালক জেনিফার নুজ্জো বলেন

আমার মনে হয়, খামারের শ্রমিকদের মধ্যে এখনো সংক্রমণ হচ্ছে, কিন্তু তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ কমে আসার কারণ হিসেবে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ভীতি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। অভিবাসন নীতির কারণে অনেক শ্রমিক পরীক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভাইরাসটি এখনো পশুদের মধ্যে, বিশেষ করে পাখি ও গরুর মধ্যে বিদ্যমান। তবে, আক্রান্তের সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা কম।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পশুর শরীরে ভাইরাস শনাক্তের হারও কমেছে, যা মানুষের ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার কমার একটি কারণ হতে পারে।

তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, হালকা উপসর্গযুক্ত অনেক রোগী হয়তো শনাক্ত হচ্ছেন না। সরকারি পর্যায়ে নজরদারি কমে যাওয়ায় উদ্বেগের কারণ হয়েছে বলেও তারা মনে করেন।

বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গবেষণা চলছে।

টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা দুগ্ধ খামারের শ্রমিকদের মধ্যে ভাইরাসটির উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করছেন। এছাড়াও, ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডে বিড়ালদের মধ্যে বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ নিয়ে গবেষণা চলছে।

সিডিসি জানিয়েছে, সাধারণ মানুষের জন্য এই ভাইরাসের ঝুঁকি এখনো কম, তবে যারা গবাদি পশু ও পাখির সঙ্গে কাজ করেন, তাদের ঝুঁকি বেশি।

ভাইরাসটির নতুন রূপ ভবিষ্যতে মহামারী সৃষ্টি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বার্ড ফ্লু’র বিস্তার এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং আক্রান্তদের দ্রুত শনাক্ত করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *