এক সময়ের জনপ্রিয় সঙ্গীত প্রযোজক এবং শিল্পী শন “ডিডি” কম্বসের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন পাচার ও অন্যান্য অভিযোগের মামলা বর্তমানে সারা বিশ্বে আলোচনার বিষয়। এই মামলার সূত্র ধরে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে তাঁর জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘মেকিং দ্য ব্যান্ড’-এর কথা, যা একসময় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
২০০০ সালে এবিসি চ্যানেলে এই রিয়েলিটি শো’টির যাত্রা শুরু হয়েছিল, যেখানে ব্যাকস্ট্রিট বয়েজ ও *এনসিঙ্ক-এর মতো ব্যান্ড তৈরি করা ল্যু পার্লম্যান ও-টাউন নামে একটি দল গঠন করেন। তবে ডিডি কম্বসের তত্ত্বাবধানে আসার পরেই এই শো-এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়ে।
২০০২ সালে এমটিভি-তে ‘মেকিং দ্য ব্যান্ড’ স্থানান্তরিত হওয়ার পর, কম্বস একটি হিপ-হপ দল তৈরির চেষ্টা করেন। নব্বই দশকের শেষের দিকে এবং ২০০০ সালের শুরুর দিকে, এমটিভির ‘টোটাল রিকোয়েস্ট লাইভ’-এর মতো শো-গুলো তরুণ প্রজন্মের সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
‘মেকিং দ্য ব্যান্ড’-ও ছিল তেমনই একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। বর্তমানে, ম্যানহাটনে ডিডি কম্বসের বিরুদ্ধে চলা ফেডারেল মামলার কারণে এই শো-টি আবার আলোচনায় এসেছে। কম্বসের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকা, যৌন পাচার, এবং পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে নারী সরবরাহ করার মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার শুনানিতে গায়িকা ডন রিচার্ডস সাক্ষ্য দেন। তিনি ‘মেকিং দ্য ব্যান্ড’-এর একজন প্রতিযোগী হিসেবে কম্বসের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। রিচার্ডস আদালতে জানান, তিনি একবার কম্বসকে তাঁর প্রাক্তন বান্ধবী ক্যাসি ভেন্টুরার চুল ধরে টানতে দেখেছিলেন।
এর বাইরে, রিচার্ডস একটি দেওয়ানি মামলায় কম্বসের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন, যৌন হয়রানি এবং মিথ্যা আটক রাখার অভিযোগও এনেছেন। যদিও কম্বস এইসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কম্বসের আইনজীবী এক বিবৃতিতে জানান, “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে রিচার্ডস তাঁদের ২০ বছরের বন্ধুত্বকে পাশে সরিয়ে রেখে ডিডি’র কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছেন। তবে মি. কম্বস আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সত্যের উপর দাঁড়িয়ে আছেন এবং আদালতে তা প্রমাণ করতে প্রস্তুত।”
শুধু রিচার্ডসই নন, ডিডির সঙ্গে কাজ করা আরও অনেকে তাঁর কঠোর আচরণের কথা উল্লেখ করেছেন। ‘মেকিং দ্য ব্যান্ড’-এর দর্শকও সেই অভিজ্ঞতার সাক্ষী থেকেছেন।
অনুষ্ঠানটির একটি উল্লেখযোগ্য পর্বে দেখা যায়, প্রতিযোগীদের ব্রুকলিনের জুনিয়রস চিজ়কেক থেকে কয়েক মাইল হেঁটে ডিডির জন্য চিজ়কেক নিয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁদের কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করার অনুমতি ছিল না।
কম্বস নাকি তাদের বলেছিলেন, “তোমরা এখান থেকে হেঁটে যাও, চিজ়কেক নিয়ে এসো, শহরটা দেখো, দৃশ্য উপভোগ করো।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এটা করছি না। এর পেছনে বৃহত্তর একটি উদ্দেশ্য আছে। সঙ্গীতের জগতে, আমাকে প্রতিদিন এমন অনেক কাজ করতে হয়, যা আমি করতে চাই না।”
এই পর্বটি নিয়ে পরবর্তীতে কমেডিয়ান ডেভ চ্যাপেল প্যারোডি করেন, যা ডিডির অতিরিক্ত আচরণের একটি উদাহরণ ছিল।
২০০৫ সালের মার্চ মাসে ‘মেকিং দ্য ব্যান্ড ৩’-এর প্রচার শুরু হয়, যেখানে ডিডি একটি মেয়েদের গানের দল তৈরি করার চেষ্টা করেন। এই শো-টি তিনটি সিজন চলেছিল এবং এর ফলস্বরূপ ড্যানিটি কেইন নামে একটি দল গঠিত হয়, যারা ‘টাচিং মাই বডি’ এবং ‘ড্যামেজড’-এর মতো গান দিয়ে খ্যাতি অর্জন করে।
২০১৮ সালে, রিচার্ডস, অড্রে ও’ডে এবং শ্যানন বেক্স একটি ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। যেখানে ডিডি ও’ডেকে দল থেকে বের করে দিয়েছিলেন, কারণ তিনি নাকি “অতিরিক্ত খোলামেলা” ছিলেন।
রিচার্ডস সেই সময়ে বলেছিলেন, “এটা তাঁর খোলামেলা হওয়ার বিষয় ছিল না, বরং ডিডি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে, তিনিই তাঁর ক্যারিয়ারের মালিক।” ও’ডে আরও যোগ করেন, “আমি তো খোলামেলাও ছিলাম না। কলেজের সিনিয়র হওয়ার পরেই আমি কুমারীত্ব হারাই।”
রিচার্ডস বলেছিলেন, “আসলে, এটা ছিল একটা অজুহাত। এর মাধ্যমে ডিডি বোঝাতে চেয়েছিলেন, ‘এটা আমার শো, এটা আমার বিষয়, এবং আমি প্রমাণ করতে চাই যে, আমি তোমাদের জীবনের উপর কত ক্ষমতা রাখি।” তিনি ডিডির আচরণকে “চরমভাবে লিঙ্গবৈষম্যমূলক” হিসেবে বর্ণনা করেন।
বেক্স উল্লেখ করেন, ও’ডে ডিডির সঙ্গে বিতর্কে জড়াতে দ্বিধা করেননি। তিনি বলেন, “যখনই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হতো, মনে হতো যেন আমরা জানতে চাইছি, ‘এটা কি ঠিক আছে?’ অড্রে এটা পছন্দ করতেন না।”
বর্তমানে, ও’ডে তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে জানিয়েছেন যে, তিনি নিউইয়র্কে আছেন, তবে ডিডির মামলার শুনানিতে তাঁর সাক্ষ্য দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
‘মেকিং দ্য ব্যান্ড’ ২০০৯ সালে শেষ হয়। ডিডির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তাঁর ক্যারিয়ার এবং জনসাধারণের কাছে তাঁর ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মামলাটি এখনো চলমান, এবং এর ফলাফল ভবিষ্যতে আরও অনেক আলোচনার জন্ম দেবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন