গাড়িতে উঠলেই বমি হয়? অন্যদের কেন হয় না, জেনে নিন!

গাড়িতে উঠলেই বমি আসে? কেন এমন হয়, আর এর থেকে বাঁচার উপায় কী?

ছোটবেলা থেকে অনেকেরই গাড়িতে উঠলে বমি হওয়ার সমস্যা থাকে। রাস্তায় বেরোলেই যেন এক বিভীষিকা! গাড়ির ঝাঁকুনি, দুলুনি, আর এর সাথে বমি বমি ভাব—এসব কিছু মিলেমিশে এক অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। অনেকেই আছেন যারা এই সমস্যায় জর্জরিত, বিশেষ করে যাদের ভ্রমণ ভালো লাগে, তাদের জন্য এটা খুবই কষ্টের।

কিন্তু কেন এমন হয়? আসুন, বিশেষজ্ঞদের মতামত ও কিছু সহজ উপায় জেনে নেওয়া যাক।

আসলে, motion sickness বা গতিজনিত অসুস্থতা হলো এক ধরনের সংবেদনশীলতার ফল। আমাদের শরীর তিনটি প্রধান উপায়ে সংকেত গ্রহণ করে: চোখের দৃষ্টি, ভেতরের কানের ভারসাম্য-রক্ষা ব্যবস্থা (vestibular system) এবং শরীরের নিজস্ব অবস্থান সম্পর্কে ধারণা (proprioception)।

যখন এই তিনটি ইন্দ্রিয়—দৃষ্টি, ভারসাম্য, এবং শরীরের সংবেদ—ভুল সংকেত পাঠায়, তখনই আমাদের মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, গাড়িতে বসে বাইরের দৃশ্য না দেখে, বই পড়া বা মোবাইল ব্যবহারের সময় আমাদের চোখ স্থির থাকে, কিন্তু ভেতরের কান গাড়ির গতি অনুভব করে।

এই দুইয়ের মধ্যেকার বিরোধের কারণে মস্তিষ্কে ‘সংবেদনশীল দ্বন্দ্ব’ তৈরি হয়, যার ফলস্বরূপ বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, motion sickness হওয়ার পেছনে কিছু কারণ জড়িত। এর মধ্যে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত, ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

এছাড়াও, নারী ও পুরুষদের মধ্যে এই সমস্যার হারে ভিন্নতা দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েদের এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা ছেলেদের তুলনায় বেশি। বংশগত কারণেও কারো কারো মধ্যে এই প্রবণতা থাকতে পারে।

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু উপায় রয়েছে। যাদের এই সমস্যা আছে, তারা গাড়ির সামনের সিটে বসতে পারেন, কারণ সেখানে বসে বাইরের দৃশ্য দেখলে মস্তিষ্কের বিভ্রান্তি কম হয়।

এছাড়াও, গাড়িতে বসে বই পড়া বা মোবাইল ব্যবহারের পরিবর্তে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকা ভালো। আদা চা বা আদার তৈরি খাবার বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে।

গাড়িতে উঠার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে পারেন। যেমন—গাড়িতে উঠার আগে ভারী খাবার খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত। এছাড়া, ভ্রমণের সময় হালকা খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।

যদি আপনার motion sickness-এর সমস্যা গুরুতর হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অনেক সময়, বমিরোধী ঔষধ (anti-emetic) এই সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

তবে, ঔষধ সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

সবশেষে, মনে রাখতে হবে, motion sickness কোনো দুর্বলতার লক্ষণ নয়। এটা সম্পূর্ণভাবে শারীরিক সংবেদনশীলতার একটি বিষয়। সঠিক ব্যবস্থা নিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *