শিরোনাম: ‘ন্যাপাম গার্ল’-এর আলোকচিত্রীর পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা: বিশ্ব প্রেস ফটো’র সিদ্ধান্ত
ষাটের দশকের ভয়াবহ ভিয়েতনাম যুদ্ধের একটি অবিস্মরণীয় ছবি ‘ন্যাপাম গার্ল’। যুদ্ধের বিভীষিকা ফুটিয়ে তোলা এই ছবিতে এক নগ্ন শিশুকে বোমা হামলার হাত থেকে বাঁচতে দৌড়াতে দেখা যায়। ছবিটি তুলেছিলেন কে, তা নিয়েই এখন দেখা দিয়েছে বিতর্ক।
বিশ্ব প্রেস ফটো (World Press Photo) ছবিটির মূল আলোকচিত্রী হিসেবে নিক উট-এর স্বীকৃতি স্থগিত করেছে।
১৯৭২ সালের ৮ই জুন, ভিয়েতনামের ট্রাং বাং গ্রামের কাছে ন্যাপাম বোমা হামলায় আহত শিশুদের মধ্যে দৌড়ানো এক কিশোরীর ছবি তোলেন নিক উট। ছবিটি ১৯৭৩ সালে বিশ্ব প্রেস ফটো কর্তৃক ‘বছরের সেরা ছবি’ নির্বাচিত হয়েছিল।
পরে পুলিৎজার পুরস্কারও জেতেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্র (ডকুমেন্টারি) প্রকাশের পর ছবিটির আলোকচিত্রীর পরিচয় নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
ডকুমেন্টারিটিতে দাবি করা হয়েছে, ছবিটি আসলে নিক উট তোলেননি, বরং ছবিটি তুলেছিলেন ভিয়েতনামের ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার নগুয়েন থানহ নগে। তথ্যচিত্রটিতে আরও অভিযোগ করা হয়েছে যে, নগে ছবিটি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর কাছে বিক্রি করেছিলেন এবং পরে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে নিক উটের নাম দেওয়া হয়।
যদিও এই দাবির স্বপক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বিশ্ব প্রেস ফটো’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ছবিটির মূল আলোকচিত্রীর স্বীকৃতি স্থগিত করেছে।
বিশ্ব প্রেস ফটোর নির্বাহী পরিচালক জৌমানা এল জেইন খৌরি তার ওয়েবসাইটে লিখেছেন, “বিদ্যমান স্বীকৃতির স্বপক্ষে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
একইসঙ্গে, অন্য কোনো আলোকচিত্রীর ছবি তোলার বিষয়ে চূড়ান্ত প্রমাণও আমাদের কাছে নেই।
এ বিষয়ে এপি একটি ৯৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
তদন্তে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার, ক্যামেরার পরীক্ষা, ঘটনার ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি এবং ছবি তোলার নেগেটিভ পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু প্রতিবেদনে আলোকচিত্রীর পরিচয় পরিবর্তনের মতো কোনো চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এপি’র মতে, “সময় পেরিয়ে যাওয়ার কারণে এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণের অভাবে” ছবিটি কে তুলেছেন, তা সম্পূর্ণরূপে প্রমাণ করা কঠিন।
তবে, বিশ্ব প্রেস ফটো’র এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে নিক উটের আইনজীবী বলেছেন, বিশ্ব প্রেস ফটোর এই সিদ্ধান্ত “অগ্রহণযোগ্য এবং পেশাদারিত্বের অভাব”।
তিনি আরও বলেন, নগের দাবি “কোনো প্রমাণ বা প্রত্যক্ষদর্শীর সমর্থন” নেই।
বর্তমানে, এই বিতর্কিত ছবিটির ভবিষ্যৎ কী হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিশ্ব প্রেস ফটো জানিয়েছে, নতুন কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে তারা তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন