আদালতে তোলপাড়: ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মুখোমুখি বিচারক, চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস!

যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে মানবাধিকার বিষয়ক তদারকির দায়িত্বে থাকা দপ্তরগুলি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ফেডারেল বিচারক আনা রেইয়েস সোমবার এক শুনানিতে জানান, এই দপ্তরগুলো পুনরায় চালু করার জন্য ট্রাম্পের একজন নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তার দেওয়া পরিকল্পনা নিয়ে তিনি সন্দিহান।

বিচারক আশঙ্কা করছেন, সম্ভবত আইনগত জটিলতা এড়ানোর জন্য এই প্রক্রিয়াটি সাজানো হচ্ছে। আদালতে শুনানিতে ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস)-এর ওম্বুডসম্যান রোনাল্ড সারতিনিকে জেরা করা হয়।

সারতিনিকে ট্রাম্প প্রশাসন নিয়োগ দিয়েছিল। বিচারক রেইয়েস জানতে চান, দপ্তরগুলো কবে নাগাদ পুনরায় কাজ শুরু করতে পারবে। মানবাধিকার বিষয়ক কর্মীদের সংগঠনগুলো অভিবাসীদের অধিকারের পক্ষে কাজ করে এবং তারা এই দপ্তরগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে।

তাদের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

**মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর বন্ধের প্রেক্ষাপট**

ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন অভিবাসন বিরোধী কঠোর নীতি গ্রহণের অংশ হিসেবে এই দপ্তরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই দপ্তরগুলোর কাজ ছিল অভিবাসীদের অধিকার রক্ষা করা এবং তাদের প্রতি হওয়া কোনো ধরনের অন্যায়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখা।

এর মধ্যে ছিল যৌন নির্যাতন, চিকিৎসা অবহেলা, এবং বলপ্রয়োগের মতো বিষয়গুলো। এই দপ্তরগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব অভিযোগের তদন্তও বন্ধ হয়ে যায়।

গত ২১শে মার্চ, এই তিনটি দপ্তরের প্রায় ৩০০ জনের বেশি কর্মীকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়, যা কার্যত তাদের চাকরিচ্যুতির শামিল ছিল। বর্তমানে দপ্তরগুলোতে হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা কাজ করছেন।

সারতিনি আদালতে স্বীকার করেন, এই দপ্তরগুলোর কিছু ক্ষেত্রে আইনগতভাবে নির্ধারিত কাজগুলিও এখন হচ্ছে না।

**বিচারকের উদ্বেগ এবং সারতানির বক্তব্য**

বিচারক রেইয়েস আশঙ্কা প্রকাশ করেন, দপ্তরগুলো পুনরায় চালু করার প্রশাসনের পরিকল্পনা আন্তরিক নাও হতে পারে। সম্ভবত, এটি কেবল আইনি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার একটি কৌশল।

সারতানির সাক্ষ্য ছিল আদালতের চোখে ধোঁকা দেওয়ার শামিল কিনা, সেই বিষয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। শুনানিতে সারতিনি জানান, তিনি মনে করেন, দপ্তরগুলো পুনরায় চালু করার বিষয়ে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)-এর নেতৃত্ব আন্তরিক।

তবে, তিনি এও বলেন, দপ্তরগুলো কিভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সারতিনি আরও উল্লেখ করেন, দপ্তরগুলো পুনর্গঠনের জন্য তিনি নতুন কর্মী নিয়োগ, অন্য বিভাগ থেকে লোক আনা এবং ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাব দেবেন।

তবে, তার এই প্রস্তাবের ওপর ডিএইচএস নেতৃত্বের অনুমোদন লাগবে।

**মামলার ভবিষ্যৎ এবং আদালতের পদক্ষেপ**

বিচারক রেইয়েস জানতে চান, পরিকল্পনা অনুমোদন পাওয়ার পর কত দ্রুত কাজ শুরু করা যেতে পারে। তিনি ডিএইচএস-এর একজন আইনজীবীকে নির্দেশ দেন, কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই বিষয়ে একটি সময়সীমা নির্ধারণ করতে।

তবে, শুনানিতে জানানো হয়, ডিএইচএস-এর ভারপ্রাপ্ত জেনারেল কাউন্সেল জোসেফ মাজাররা জরুরি ভিত্তিতে একটি ফ্লাইটে উঠছেন, তাই মঙ্গলবার সকালে তারা আদালতের কাছে জবাব দেবেন। আদালতে এই মামলার শুনানি এখনো চলছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের মূল অভিযোগ হলো, এই দপ্তরগুলো বন্ধ করে দেওয়ার ফলে অভিবাসীদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *