মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত অনেক সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি বিষয় সম্ভবত সঠিক পথে রয়েছে। যদিও তার অনেক নীতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তবে ফেডারেল সরকারের ব্যয় সংকোচের ব্যাপারে তার পদক্ষেপ, বিশেষ করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বাজেট কাটছাঁটের প্রস্তাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সম্প্রতি, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৬ সাল নাগাদ মাদক নিয়ন্ত্রণ প্রশাসন (DEA), ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (FBI), এবং অন্যান্য বিচার বিভাগীয় সংস্থার বাজেট প্রায় ৫৮ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার কমানোর পরিকল্পনা করছে।
এই ধরনের পদক্ষেপের কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে থাকা এই সংস্থাগুলোর ক্ষমতা ও কার্যক্রমের ওপর নজরদারি বাড়ানো। অনেক দিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে, এই সংস্থাগুলো তাদের সীমাহীন ক্ষমতা ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে গুরুতর ভুল করেছে, যা অনেক ক্ষেত্রে কৌশলগত এবং মানবিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।
কিন্তু তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি, বরং তাদের আরও বেশি সম্পদ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে, ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলই কোনো দ্বিধা ছাড়াই এই নিরাপত্তা বিষয়ক কাঠামোকে শক্তিশালী করেছে। এর ফলে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কার্যত একটি ‘রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্র’-এ পরিণত হয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে তাদের কার্যক্রম প্রায়ই গোপন রাখা হয়, যা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে। অনেক সময়, এই সংস্থাগুলো তাদের সুবিধা মতো তথ্য প্রকাশ করে এবং সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন, কারণ এর মাধ্যমে অন্তত একটি বিষয়ে হলেও, ক্ষমতাধর সংস্থাগুলোর লাগাম পরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে এবং জবাবদিহিতার বাইরে থেকে গেছে।
তাদের এই স্বেচ্ছাচারিতার অবসান হওয়া জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, সিআইএ-এর (CIA) কথা বলা যেতে পারে, যারা অতীতে বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে ভূমিকা রেখেছে।
তবে, এই বাজেট কাটছাঁটের সিদ্ধান্তের কারণে অনেকেই উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে, ডেমোক্রেট এবং সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এর বিরোধিতা করছেন। তারা মনে করেন, এর ফলে আমেরিকার নিরাপত্তা দুর্বল হয়ে পড়বে।
কিন্তু সমালোচকদের মতে, এই সংস্থাগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো এবং তাদের ক্ষমতাকে সীমিত করা সময়ের দাবি।
এই প্রসঙ্গে, একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, অতীতে ডেমোক্রেটরাও এইসব সংস্থার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে গিয়ে তারা যেন নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেক্ষাপটে, প্রশ্ন উঠতে পারে, বাংলাদেশেও কি এমন কোনো বিষয় রয়েছে, যেখানে সরকারি সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন? আমাদের দেশেও কি এমন কোনো ব্যবস্থা আছে, যা জাতীয় নিরাপত্তার নামে নাগরিকদের অধিকার খর্ব করে?
এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা এবং একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা