গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড়।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে চালানো হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৬০ জনে।
ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। হামলায় একটি পরিবার ও একটি আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হওয়া একটি স্কুলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, তারা হামাসকে নির্মূল করতে এবং তাদের হাতে বন্দী জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতেই এই অভিযান চালাচ্ছে। গত কয়েকদিনে গাজায় নতুন করে এই অভিযান শুরু হয়েছে।
ইসরায়েলের দাবি, তারা গাজা দখল করতে চায় এবং সেখানে থাকা ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিয়ে ত্রাণ বিতরণ নিশ্চিত করতে চায়।
এদিকে, ইসরায়েলের এই অভিযানের কারণে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির সংকট দেখা দেওয়ায় গাজায় মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়ছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় মানবিক সহায়তা যথেষ্ট নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আগে যুদ্ধবিরতির সময় প্রতিদিন প্রায় ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করত।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, মিত্র দেশগুলোর চাপের কারণে তিনি সীমিত আকারে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন।
মিত্র দেশগুলো গাজায় “ক্ষুধার ছবি” দেখতে পাওয়ার কারণে ইসরায়েলকে সমর্থন করতে পারছিল না।
কানাডা, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। তারা গাজায় ইসরায়েলের নতুন সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
তবে নেতানিয়াহু এই সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এটি হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার “পুরস্কার”।
গাজায় ইসরায়েলের এই সামরিক কার্যক্রমের সমালোচনা শুধু আন্তর্জাতিক মহল থেকেই আসছে না, দেশের ভেতরেও অনেকে এর বিরোধিতা করছেন।
ইসরায়েলের বিরোধী দলের নেতা ইয়ার গোলান বলেছেন, সরকারের এই নীতির কারণে ইসরায়েল “জাতিসমূহের মধ্যে একঘরে” হয়ে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, “একটি সুস্থ দেশ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না, শখ করে শিশুদের হত্যা করে না এবং জনগণকে বিতাড়িত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে না।
গোলানের এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে নেতানিয়াহু বলেছেন, এটি ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে “উগ্র উসকানি”।
তিনি গোলানকে দেশের বিরুদ্ধে “ঘৃণ্য ইহুদি-বিরোধী অপবাদ” দেওয়ারও অভিযোগ করেন।
গাজায় সাম্প্রতিক হামলায় বেশ কয়েকটি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে খান ইউনিস শহরের একটি পরিবার ও একটি স্কুলে হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছে।
দেইর আল-বালাহ শহরে হামলায় ১৩ জন এবং নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ১৫ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া, খান ইউনিস শহরে আরও দুটি হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এসব হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
তারা জানিয়েছে, কেবল জঙ্গিদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয় এবং বেসামরিক হতাহতের জন্য হামাসকে দায়ী করা হয়, কারণ তারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কাজ করে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল। এতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর থেকে ইসরায়েল গাজায় প্রতিশোধমূলক অভিযান চালাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এই অভিযানে বেশিরভাগ নারী ও শিশুসহ ৫০,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।