ভিতরে কি চলছিল? বাইডেনের ক্ষমতা নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের নীরবতা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে, সম্প্রতি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সিএনএন এবং অ্যাক্সিওস-এর সাংবাদিকদের লেখা একটি নতুন বইয়ে বাইডেনের শারীরিক অবস্থার অবনতি এবং তাঁর পুনরায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্তের পেছনে থাকা বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

বইটির নাম “অরিজিনাল সিন: প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অবক্ষয়, এর গোপনীয়তা এবং তাঁর বিপর্যয়কর পুনরায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত।”

বইটিতে বাইডেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ডেমোক্রেটিক দলের নেতাদের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের অনেকেই বাইডেনের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, কিন্তু প্রকাশ্যে মুখ খুলতে দ্বিধা বোধ করেছেন।

বইটিতে এমন কিছু ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, যেখানে বাইডেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম পর্যন্ত মনে রাখতে পারছিলেন না। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং যোগাযোগ পরিচালকের নামও তিনি ভুলে গিয়েছিলেন।

এমনকি, খ্যাতনামা অভিনেতা জর্জ ক্লুনিকেও তিনি চিনতে পারেননি।

বইটি প্রকাশের পর বাইডেনের শারীরিক অবস্থা এবং তাঁর নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। রিপাবলিকান দলের নেতারা তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

যদিও ডেমোক্রেটিক দলের অনেকে বাইডেনের প্রতি সমর্থন জানালেও, তাঁর শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে তাঁদের মনে সংশয় রয়েছে।

বইটিতে আরও বলা হয়েছে যে, বাইডেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও উপদেষ্টারা তাঁকে রক্ষা করার জন্য একটি বিশেষ বলয় তৈরি করেছিলেন। তাঁরা বাইডেনকে নেতিবাচক তথ্য থেকে দূরে রাখতেন, যা তাঁর পুনরায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।

এমনকি, কিছু সহযোগী মনে করতেন, বাইডেন যদি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব তৈরি করেন, তবে তিনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান।

বাইডেনের শারীরিক অবস্থার অবনতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠলেও, তাঁর দল এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা তা সবসময় অস্বীকার করেছেন।

বাইডেন এবং তাঁর স্ত্রী জিল বাইডেন এই অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন এবং তাঁদের কাজের প্রতি সমর্থন চেয়েছেন।

বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাইডেনের দুর্বল স্বাস্থ্যের বিষয়টি ২০২০ সাল থেকেই উদ্বেগের কারণ ছিল। তাঁর দলের অনেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।

এমনকি, হোয়াইট হাউসের চিফ অফ স্টাফও মনে করতেন, বাইডেনের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত।

বাইডেনের স্বাস্থ্য নিয়ে বিতর্ক আরও জোরদার হয় যখন বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট হার তাঁর ক্লাসিফাইড ডকুমেন্ট বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। যদিও হার বাইডেনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনেননি, তবে তাঁর স্মৃতিশক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

বইটিতে আরও বলা হয়েছে, বাইডেনের দলের অভ্যন্তরে তাঁর পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ডেমোক্রেটিক দলের প্রভাবশালী নেতারা বাইডেনকে নির্বাচন থেকে সরে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।

তাঁদের আশঙ্কা ছিল, নির্বাচনে বাইডেন পরাজিত হলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এই বিতর্কের মধ্যে বাইডেনের প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে, যা তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।

এই ঘটনাগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাইডেনের শারীরিক অবস্থা এবং তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *