আতঙ্কে পরিবার! ট্রাম্পের আমলে ভাঙছে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার সম্পর্ক?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কে ফাটল: সীমান্ত অঞ্চলের মানুষের জীবন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যেকার সম্পর্ক, যা ঐতিহাসিকভাবে খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিচিত, সেই সম্পর্কে এখন চিড় ধরছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ওয়াশিংটনের একটি সীমান্ত শহর, পয়েন্ট রবার্টসে।

এই শহরের মানুষজন, যাদের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি অনেকাংশে কানাডার ওপর নির্ভরশীল, তারা এখন এই পরিবর্তনের সাক্ষী।

পয়েন্ট রবার্টস, ভৌগোলিকভাবে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কাছাকাছি অবস্থিত এবং এর প্রায় সব প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য কানাডার উপর নির্ভর করতে হয়। এখানকার বাসিন্দাদের অধিকাংশই হয় দ্বৈত নাগরিক—যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা উভয় দেশের নাগরিক।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় এই শহরের মানুষজন বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু বিতর্কিত মন্তব্য এবং সীমান্ত অঞ্চলে হয়রানির অভিযোগ এখানকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

পয়েন্ট রবার্টসের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্রায়ান ক্যালডার অন্যতম। তিনি জানান, “আমাদের পরিবারের অর্ধেক সদস্য সীমান্তের একদিকে, আর বাকি অর্ধেক অন্য দিকে বাস করে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার সম্পর্ক এখানকার মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।”

কিন্তু এখন অর্থনৈতিক এবং আবেগগত কারণে সেই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে।

ক্যালডারের এক আত্মীয় বিল ক্যালডার কানাডার বাসিন্দা। তিনিও জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে তিনি এখন আর আগের মতো পয়েন্ট রবার্টসে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তিনি বলেন, “আগে প্রায়ই সেখানে যেতাম, কিন্তু এখন আর যেতে ইচ্ছে করে না।”

পয়েন্ট রবার্টসের অর্থনীতি মূলত কানাডা থেকে আসা পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে কানাডিয়ান নাগরিকদের মধ্যে এখন এই শহরে আসার প্রবণতা কমে গেছে। সেখানকার একটি মুদি দোকানের মালিক ডেভ ডানকান জানান, তাদের বিক্রি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।

এছাড়া, একটি ক্যাফে’র মালিক তামরা হ্যানসেন জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের বিক্রি প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গেছে।

পয়েন্ট রবার্টসের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী হিউ উইলসন বলেন, “কানাডার পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় ব্যবসার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।” ব্রায়ান ক্যালডারের মতে, পর্যটকদের আগমন কমে যাওয়ায় শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভাব পড়েছে।

কানাডার সরকারও তাদের নাগরিকদের সীমান্ত অতিক্রম করার সময় সতর্ক থাকতে বলেছে। সম্প্রতি, কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মার্ক কার্নে নির্বাচিত হয়েছেন।

তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন, যা কিছুটা ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হওয়া এখনো অনিশ্চিত।

পয়েন্ট রবার্টসের মানুষেরা এখন এই পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা আশা করছেন, দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক আবার আগের মতো স্বাভাবিক হবে, যা তাদের জীবনযাত্রা ও ব্যবসার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *