ইউক্রেন যুদ্ধ: আকাশে কি উড়বে ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান?

ইউক্রেনের আকাশে যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে। এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মোকাবিলা করা এবং ইউক্রেনের আকাশসীমাকে সুরক্ষিত রাখা।

‘স্কাইশিল্ড’ নামে পরিচিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে তাদের যুদ্ধবিমান মোতায়েন করতে পারে।

তবে, এমন পদক্ষেপে বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি, হতাহতের সম্ভাবনা এবং রাশিয়া কর্তৃক সংঘাত আরও বাড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কা। রাশিয়া ইতোমধ্যেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ইউক্রেনে বিদেশি কোনো সামরিক উপস্থিতি তাদের জন্য বৈধ লক্ষ্য হবে।

এই স্কাইশিল্ড পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, ইউরোপীয় বিমানগুলো পোল্যান্ড ও রোমানিয়া থেকে উড়ে এসে মূলত ডিনিপ্রো নদীর পশ্চিম দিকে, কিয়েভসহ দেশটির উত্তরাঞ্চলে বেসামরিক অবকাঠামো ও রফতানি পথ রক্ষার কাজ করবে। এর ফলে ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী দেশের পূর্বাঞ্চলে, যেখানে যুদ্ধ চলছে, সেখানে মনোযোগ দিতে পারবে।

এই প্রকল্পের ধারণাটি এসেছে ইউক্রেনের একটি থিংক ট্যাংক ‘প্রাইস অফ ফ্রিডম’-এর কাছ থেকে। তাদের প্রস্তাবনায়, এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১২০টি ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান প্রয়োজন হবে। তবে, এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন বেশ কঠিন হতে পারে।

কারণ হিসেবে বিমান পরিচালনার উচ্চ খরচ, পাইলটদের প্রশিক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়গুলো উঠে আসে। উদাহরণস্বরূপ, একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের প্রতি ঘণ্টার উড়ান খরচ ২৮,০০০ মার্কিন ডলার, যেখানে চতুর্থ প্রজন্মের একটি রাফালে জেট বিমানের খরচ প্রায় ৪৫,০০০ মার্কিন ডলার।

সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিমান ব্যবহার না করে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করা যেতে পারে, যা অনেক কম খরচে কাজ করবে। তাছাড়াও, একটি ইউরোপীয় বিমান ভূপাতিত হলে এবং কোনো পাইলট নিহত হলে, তা সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে।

এই প্রকল্পের সঙ্গে ইউক্রেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক আকাঙ্ক্ষা জড়িত রয়েছে। সেটি হলো, তারা তাদের নতুন পাওয়া এফ-১৬ যুদ্ধবিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত হানতে চায়। বিশেষ করে, যে বিমানঘাঁটিগুলো থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বোমা হামলা চালাচ্ছে, সেগুলোকে তারা লক্ষ্যবস্তু করতে চায়।

রাশিয়া বর্তমানে ফ্রন্ট লাইনে নিয়ন্ত্রিত বোমা (সিএবি) ব্যবহার করছে, যা ইউক্রেনের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে রাজি নয়, যা ন্যাটোর সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দেয়। কারণ, তারা মনে করে, এর ফলে সংঘাত আরও বাড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইউক্রেনকে ৩০০ কিলোমিটার পাল্লার ‘আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেমস’ (এটিএসিএমএস) দেওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অনীহা দেখা যায়।

জার্মানিও তাদের ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ‘তাউরাস’ ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে পাঠাতে দ্বিধা বোধ করছে।

মোটকথা, স্কাইশিল্ড পরিকল্পনাটি ইউক্রেনের আকাশ সুরক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, এর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে ইউরোপীয় দেশগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সামরিক সক্ষমতা এবং রাশিয়ার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার ওপর।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *