ফের ক্ষমতায় ফিরছেন ট্রাম্পের সমালোচিত প্রাক্তন কর্মকর্তারা! তোলপাড়!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে বিতর্কিত মন্তব্য এবং কাজের জন্য যারা বিভিন্ন পদ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আবার গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। সম্প্রতি এমন কয়েকজন ব্যক্তির নাম শোনা যাচ্ছে, যাদের অতীত রাজনৈতিকভাবে বেশ ‘বিষাক্ত’ ছিল বলে মনে করা হয়।

এমনকি সিনেটের অনুমোদন পাওয়ারও যোগ্য ছিলেন না তারা। এই ঘটনা ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের একটি উল্লেখযোগ্য প্রবণতা, যেখানে বিতর্কিত ব্যক্তিরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ফিরে পাচ্ছেন।

এই তালিকায় রয়েছেন অন্তত চারজন, যাদের মধ্যে কেউ নারী ভোটাধিকারের বিরোধিতা করেছেন, কেউ শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের সম্মেলনে বক্তৃতা দিয়েছেন, আবার কেউ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে সন্ত্রাসী নেতা আখ্যা দিয়েছেন। এছাড়াও, হিলারি ক্লিনটনকে ‘স্মৃতিভ্রষ্ট সন্ত্রাসী’ এবং সিনেটর টেড ক্রুজের স্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর সরকার একত্র করার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।

এই ব্যক্তিরা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে হয় পদ হারান, নয়তো তাদের পদাবনতি হয়েছিল। কিন্তু এখন তাদের হয় পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, না হয় নতুন করে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। সমালোচকদের মতে, এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যপন্থী ও যুক্তিবাদী কণ্ঠস্বরকে এক প্রকার এড়িয়ে যাচ্ছে এবং আনুগত্যকে যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করছে।

তাদের প্রত্যাবর্তনের কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত পুরোনো কর্মীদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চাইছে। তাদের রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতাও একটি বড় কারণ হতে পারে।

এই তালিকায় থাকা কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:

১. জন গিবস:

জন গিবস-এর কথা ধরুন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি হাউজিং অ্যান্ড আর্বান ডেভেলপমেন্ট বিভাগে (Department of Housing and Urban Development – HUD) গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। পরবর্তীতে তাকে ফেডারেল সিভিল সার্ভিসের কর্মী নিয়োগ ও বেতন সহ বিভিন্ন বিষয় তদারকির দায়িত্বে থাকা অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্টের (Office of Personnel Management) প্রধান হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

কিন্তু সিএনএন-এর কে-ফাইল (KFile)-এর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, তিনি হিলারি ক্লিনটনের ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচার শিবিরের প্রধানের বিরুদ্ধে শয়তানের উপাসনার সঙ্গে জড়িত থাকার ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছিলেন। এছাড়াও, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের সমর্থন করারও অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।

যদিও পরবর্তীতে তিনি মিশিগানে কংগ্রেসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। বর্তমানে তাকে ওটাওয়া কাউন্টির প্রশাসকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

২. ড্যারেন বিটি:

ড্যারেন বিটি ছিলেন হোয়াইট হাউসের একজন প্রাক্তন বক্তা। শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের একটি সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার কারণে ২০১৮ সালে তাকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর তিনি কট্টর-ডানপন্থী একটি ওয়েবসাইটে কাজ শুরু করেন, যেখানে ৬ জানুয়ারির ঘটনার মিথ্যা তত্ত্ব প্রচার করা হতো।

এছাড়াও, তিনি বর্ণবাদী ও নারীবিদ্বেষী মন্তব্যও করেছেন। বর্তমানে বিটিকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের আন্ডার সেক্রেটারি ফর পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যেখানে তিনি সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা তৈরিতে সহায়তা করবেন।

৩. অ্যান্থনি টাটা:

সাবেক সেনা কর্মকর্তা অ্যান্থনি টাটাকে ২০১৯ সালে পেন্টাগনের উচ্চপদে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার বিতর্কিত মন্তব্য এবং সামরিক রেকর্ডের কারণে সিনেটে তার মনোনয়ন আটকে যায়।

তিনি বারাক ওবামাকে সন্ত্রাসী নেতা এবং ইসলামকে সহিংস ধর্ম হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এছাড়াও, সাবেক সিআইএ প্রধান জন ব্রেনানকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও তুলেছিলেন তিনি। বর্তমানে টাটাকে প্রতিরক্ষা বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যেখানে তিনি সামরিক বাহিনীর কর্মী নিয়োগ ও সুযোগ-সুবিধা বিষয়ক নীতি নির্ধারণ করবেন।

৪. লিওনার্দো রিজ্জুতো জুনিয়র:

বিউটি প্রোডাক্ট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কনার-এর উত্তরাধিকারী লিওনার্দো রিজ্জুতো জুনিয়রের নামও এই তালিকায় রয়েছে। ২০১৬ সালে তাকে বার্বাডোজ ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

কিন্তু বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে তার মনোনয়ন আটকে যায়। তিনি সিনেটর টেড ক্রুজের প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন এবং হিলারি ক্লিনটনকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করেছিলেন।

বর্তমানে রিজ্জুতোকে অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস-এ (Organization of American States) যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।

এই ঘটনাগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি এবং আদর্শের একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। বিতর্কিত ব্যক্তিদের পুনরায় গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত অনেককে হতাশ করেছে।

এই ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে কেমন প্রভাব ফেলবে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *