যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা সংবাদ সংস্থা সিবিএস নিউজের অভ্যন্তরে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ এবং কর্পোরেট স্বার্থের দ্বন্দ্বে সংবাদ পরিবেশনের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সংবাদ মাধ্যমটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়েন্ডি ম্যাকমোহন পদত্যাগ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ট্রাম্পের আইনি চাপ এবং আসন্ন একটি সম্ভাব্য বিলিয়নার ডলারের মার্জারের অনুমোদনের লক্ষ্যে সিবিএস কর্তৃপক্ষের মধ্যে মতবিরোধ চলছিল। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কঠোর সংবাদ পরিবেশনের কারণে এই চাপ আরও বাড়ে।
বিশেষ করে, অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ‘সিক্সটি মিনিটস’-এর বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তীব্র আপত্তি ওঠে।
সিবিএস-এর মূল কোম্পানি প্যারামাউন্ট গ্লোবালের প্রধান শারী রেডস্টোন ইসরায়েল ও ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থনকারী হিসেবে পরিচিত। তাঁর আপত্তির মূল কারণ ছিল ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এবং ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের খবর নিয়ে ‘সিক্সটি মিনিটস’-এর কিছু প্রতিবেদন।
রেডস্টোনের এই হস্তক্ষেপ সংবাদ বিভাগের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি, ট্রাম্পের একটি মামলার কারণে সিবিএস-এর কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, গত অক্টোবরে কমলা হ্যারিসকে নিয়ে করা ‘সিক্সটি মিনিটস’-এর একটি সাক্ষাৎকারের কারণে ট্রাম্প সিবিএস-এর বিরুদ্ধে মামলা করেন। যদিও আইন বিশেষজ্ঞরা এই মামলাকে ভিত্তিহীন বলে মনে করছেন, তারপরও রেডস্টোন এই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।
কারণ, তাঁর কোম্পানি স্কাইডান্স মিডিয়ার সঙ্গে একটি মার্জার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনজন ডেমোক্রেট সিনেটর এক চিঠিতে প্যারামাউন্টের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ তোলেন। শোনা যাচ্ছে, ট্রাম্পের সঙ্গে একটি সমঝোতা হতে পারে, যেখানে সিবিএস-কে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হতে পারে।
ওয়েন্ডি ম্যাকমোহন এবং ‘সিক্সটি মিনিটস’-এর প্রযোজক বিল ওয়ান্স এই ধরনের সমঝোতার অংশ হতে রাজি ছিলেন না। তাই তাঁদের পদত্যাগ এই সমঝোতার ইঙ্গিত বহন করে।
ওয়েন্ডি ম্যাকমোহনের উত্তরসূরি হিসেবে টম সিব্রোস্কিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সংবাদকর্মীরা আশা করছেন, সিব্রোস্কি কর্পোরেট স্বার্থ এবং সাংবাদিকতার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবেন।
সিবিএস নিউজের এই সংকট প্রমাণ করে, রাজনৈতিক চাপ এবং কর্পোরেট স্বার্থ কীভাবে সংবাদ পরিবেশনের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করতে পারে। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন