যুক্তরাষ্ট্রে ছোট পারমাণবিক চুল্লি: নতুন দিগন্তের সূচনা?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা, টেনেসি ভ্যালি অথরিটি (টিভিএ), ছোট আকারের পারমাণবিক চুল্লি (Small Modular Reactor – SMR) নির্মাণের জন্য ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রথম বারের মতো অনুমতি চেয়েছে। ওক রিজ, টেনেসি-র ক্লিন্চ রিভার সাইটে এই চুল্লি স্থাপন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
টিভিএ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডন মৌল বলেছেন, তারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে অন্যান্য সংস্থাগুলোর জন্য ছোট পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের পথ সুগম করতে চায়। তার মতে, পারমাণবিক শক্তি নির্ভরযোগ্য এবং কার্বনমুক্ত।
এটি উন্নত মানের বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
টিভিএ-এর এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে যখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। তাদের অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা ২০৩৫ সাল নাগাদ ২৬ গিগাওয়াট পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা প্রায় ১৫ মিলিয়ন বাড়ির জন্য যথেষ্ট।
টিভিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ছোট আকারের পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে চায়।
এই প্রকল্পের জন্য তারা এরই মধ্যে প্রায় ৩৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে।
তবে, ছোট পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর আগে, জর্জিয়া পাওয়ার কোম্পানির প্ল্যান্ট ভগল-এর মতো বড় আকারের পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণে খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছিল এবং সময়ও লেগেছিল বেশি।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (Massachusetts Institute of Technology) নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জ্যাকোপো বুওর্জিওর্নো মনে করেন, টিভিএ-র এই সিদ্ধান্ত একটি নতুন প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যদিকে, পরিবেশ বিষয়ক কিছু সংগঠন মনে করে, সৌর প্যানেল, ব্যাটারি সংরক্ষণ এবং বায়ু শক্তি-এর মতো নির্ভরযোগ্য এবং পরীক্ষিত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসগুলিতে বিনিয়োগ করা অনেক বেশি সাশ্রয়ী, নিরাপদ এবং দ্রুত ফলপ্রসূ হবে।
কানাডার অন্টারিও প্রদেশেও অনুরূপ একটি প্রকল্প চলছে। সেখানে ছোট আকারের চারটি পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
অন্টারিও পাওয়ার জেনারেশন জিই হিটাচি-র ডিজাইন করা একই ধরনের চুল্লি তৈরি করছে, যা টিভিএ তৈরি করতে চাইছে।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রথম চুল্লিটি নির্মাণে প্রায় ৬.১ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে।
মার্কিন সরকারও এই ধরনের চুল্লি নির্মাণের জন্য বিনিয়োগ করছে। বাইডেন প্রশাসন গত বছর এই খাতে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
এই বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো শিল্প এবং ডেটা সেন্টারের মতো বিদ্যুৎ-নিবিড় ক্ষেত্রগুলোতে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা।
যদি সবকিছু পরিকল্পনা মতো চলে, তবে ২০৩২ সাল নাগাদ এই চুল্লি চালু হতে পারে এবং এটি প্রায় ১৭৫,০০০ বাড়ির জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি এই বিষয়টির দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যায়, আমাদের দেশেও বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস অনুসন্ধানের পাশাপাশি বিকল্প হিসাবে পারমাণবিক বিদ্যুতের সম্ভাবনা বিবেচনা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ, বিশেষ করে ছোট আকারের পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের উদ্যোগ, আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস