সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা বিশ্বজুড়ে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ, তাদের বিমানবন্দরের সক্ষমতা আরও একধাপ বাড়াতে চলেছে। সম্প্রতি, তারা পঞ্চম টার্মিনাল, টি৫ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে, যা ২০৩০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
গত ১৪ই মে, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়ং এই বিশাল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
চাঙ্গি বিমানবন্দরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াম কুম ওয়ং এই নতুন টার্মিনালটিকে “বিশাল অথচ আরামদায়ক” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। টি৫ তৈরি হলে এটি হবে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এবং তাদের সহযোগী সংস্থা স্কুটের প্রধান কেন্দ্র।
বর্তমানে, এই দুটি এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম বিমানবন্দরের বিভিন্ন টার্মিনালে বিভক্ত অবস্থায় রয়েছে। নতুন এই টার্মিনালটি যাত্রীদের জন্য একটি ব্যক্তিগতকৃত, চাপমুক্ত এবং অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে।
এই প্রকল্পের পরিকল্পনা ২০১৩ সালে ঘোষণা করা হয়েছিল, এবং ২০২০ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে তা পিছিয়ে যায়।
কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নতুন টার্মিনালটিতে অতিরিক্ত কিছু ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিশেষ বায়ু চলাচল ব্যবস্থা, যা ভবিষ্যতে কোনো মহামারীর সময় সক্রিয় করা যাবে। এছাড়া, যাত্রীদের জন্য সম্পূর্ণ যোগাযোগহীন প্রবেশাধিকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে সবকিছু সম্পন্ন করা যাবে।
টার্মিনালের ছাদের বিশেষ নকশা বাতাসের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এটিকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করা যাবে।
চাঙ্গি বিমানবন্দরের খ্যাতি শুধু এর আধুনিক সুযোগ-সুবিধার জন্য নয়, বরং এর আকর্ষণীয় স্থানগুলোর জন্যও। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বাগান, যেমন – প্রজাপতি বাগান, ক্যাকটাস বাগান, জলজ লিলি এবং অর্কিডের বাগান।
এছাড়াও, শিশুদের খেলার জায়গা, বিশাল আকারের স্লাইড, রুফটপ সুইমিং পুল এবং সিনেমা হলের মতো বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। সম্প্রতি এখানে যুক্ত হয়েছে ১০ তলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল বিপণিবিতান ‘জুয়েল’, যার প্রধান আকর্ষণ হলো বিশ্বের বৃহত্তম ইন্ডোর জলপ্রপাত। যারা ভ্রমণ করতে আসে না, তারাও এখানে এসে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।
নতুন টার্মিনালটি সিঙ্গাপুরের আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। এখানে একটি বিশাল সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে, যা শুধু বিমানবন্দরের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করবে না, বরং প্রায় ২০,০০০ চার কক্ষের অ্যাপার্টমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হবে।
গত বছর, ৬ কোটি ৮০ লক্ষেরও বেশি যাত্রী চাঙ্গি বিমানবন্দর ব্যবহার করেছে, যা এটিকে বিশ্বের চতুর্থ ব্যস্ততম বিমান কেন্দ্রে পরিণত করেছে। সিঙ্গাপুর থেকে বর্তমানে ১৭০টি শহরে সরাসরি বিমান চলাচল করে।
চাঙ্গি বিমানবন্দরের এই সম্প্রসারণ বাংলাদেশের ভ্রমণকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর। কারণ, এটি এ অঞ্চলের মানুষের জন্য উন্নত সংযোগ এবং ভ্রমণের সুযোগ তৈরি করবে। বিশেষ করে, যারা কাজের সূত্রে বিদেশে থাকেন, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি ট্রানজিট হাব।
তথ্য সূত্র: সিএনএন