লাগেছে! বিশ্ববিখ্যাত শেফ কোয়ামে ওনওয়াচি-র নতুন রেস্তোরাঁ, “মারুন”, এবার আলো ছড়াতে চলেছে লাস ভেগাসে। সাহারা লাস ভেগাস-এ খুব শীঘ্রই এর যাত্রা শুরু হবে। এই খবরে খাদ্যরসিকদের মধ্যে উৎসাহের ঢেউ লেগেছে, কারণ ওনওয়াচি-র রান্নার নিজস্বতা এবং সংস্কৃতি মিশ্রিত করার ক্ষমতা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত।
শেফ কোয়ামে ওনওয়াচি-র জন্ম নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কসে, এবং তাঁর শিকড় আফ্রো-ক্যারিবীয় সংস্কৃতিতে প্রোথিত। তাঁর রান্নার প্রতিটি পদে এই দুই সংস্কৃতির ছাপ সুস্পষ্ট।
“মারুন” -এ তিনি ক্লাসিক আমেরিকান স্টেকহাউস-এর ধারণাকে ক্যারিবীয় রান্নার স্বাদ ও ঐতিহ্যের মোড়কে নতুনভাবে পরিবেশন করতে চলেছেন। এখানে পাওয়া যাবে “জার্ক” মশলার ঘ্রাণযুক্ত মাংস, বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি “ড্রাই-এজড” মাংস, লাইভ-ফায়ার-এ রান্না করা সি-ফুড, স্কচ বনেট-এর ঝাঁঝালো সস এবং ওয়েস্ট আফ্রিকান, জ্যামাইকান ও ক্রেওল ঐতিহ্যপূর্ণ সব পদ।
রেস্তোরাঁর নামকরণের পেছনেও রয়েছে গভীর তাৎপর্য। “মারুন” নামটি এসেছে জ্যামাইকার “মারুন” সম্প্রদায় থেকে। এরা ছিল সেইসব আফ্রিকানদের বংশধর, যারা দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে পালিয়ে গিয়ে জ্যামাইকার ব্লু মাউন্টেন-এ নিজেদের স্বাধীন জনপদ গড়ে তুলেছিল। শেফ ওনওয়াচি মনে করেন, “মারুন”-এর ধারণা কেবল একটি রেস্তোরাঁ নয়, বরং খাদ্যরসিকদের কাছে ইতিহাসের পুনর্গঠন।
তাঁর মতে, “খাবার শুধু পেট ভরানোর বিষয় নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রতিরোধের গল্প।”
লাস ভেগাসে এই ধরনের খাদ্য-সংস্কৃতির উপস্থাপন নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সাধারণত, লাস ভেগাসের রেস্তোরাঁগুলিতে আমেরিকান বা ইউরোপীয় ঘরানার খাবারের প্রাধান্য দেখা যায়।
“মারুন”-এর আগমন সেখানকার খাদ্য জগতে ভিন্নতা আনবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এটি এমন একটি শহরের জন্য উপযুক্ত, যেখানে বিলাসিতার পাশাপাশি সংস্কৃতির প্রতি মনোযোগ বাড়ছে।
শেফ ওনওয়াচি এর আগেও তাঁর রন্ধনশৈলী দিয়ে জয় করেছেন অসংখ্য মানুষের মন। নিউইয়র্কের লিংকন সেন্টারে তাঁর “তাতiana by Kwame Onwuachi” রেস্তোরাঁটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এমনকি ২০২৩ ও ২০২৪ সালে, “দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস”-এর বিচারে এটি নিউইয়র্কের সেরা রেস্তোরাঁর স্বীকৃতিও পেয়েছে।
এছাড়াও, ওয়াশিংটন ডিসিতে তাঁর নতুন প্রকল্প “ডোগন”-ও বেশ সাড়া ফেলেছে।
“মারুন”-এর মাধ্যমে শেফ ওনওয়াচি লাস ভেগাসেও একই সাফল্য পেতে আগ্রহী। সাহারা লাস ভেগাস-এর মালিক অ্যালেক্স মেরুয়েলো জানিয়েছেন, “আমরা কোয়ামে ওনওয়াচি-কে আমাদের খাদ্যযাত্রার অংশীদার হিসেবে পেয়ে আনন্দিত। তাঁর গল্প বলার ধরন, সংস্কৃতি এবং অসাধারণ রান্নার মিশেল সত্যিই অতুলনীয়। “মারুন” কেবল শেফের ব্যক্তিগত স্বপ্ন পূরণ করবে না, বরং এখানকার স্টেকহাউস-এর অভিজ্ঞতাকেও নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেবে।”
শেফ ওনওয়াচি শুধু একজন রন্ধনশিল্পী নন, তিনি সমাজ পরিবর্তনের একজন সক্রিয় কর্মীও। তিনি “মিরি” নামে একটি স্পার্কলিং ওয়াটার ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন, যার লাভের একটি অংশ নাইজেরিয়ার দরিদ্র সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপদ জল সরবরাহ প্রকল্পে ব্যয় করা হয়।
তাঁর ভাষায়, “লক্ষ্য হলো এমন কিছু তৈরি করা, যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। খাদ্য হোক বা সমাজসেবা, এর মাধ্যমে মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনাই আমার প্রধান উদ্দেশ্য।”
সুতরাং, যারা লাস ভেগাসে ভ্রমণে যাবেন, তাঁরা সাহারা-তে “মারুন”-এ গিয়ে এই ব্যতিক্রমী স্বাদ ও সংস্কৃতির সাক্ষী হতে পারেন।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার