মর্মান্তিক! কাশ্মীর সীমান্তে শিশুদের মৃত্যুতে হৃদয়বিদারক দৃশ্য

কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গোলাগুলিতে শিশুদের মৃত্যু, শোকের ছায়া।

জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান অস্থিরতায় আবারও শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। সীমান্তের কাছাকাছি গ্রামগুলোতে উভয়পক্ষের গোলাবর্ষণে নিহত হয়েছে নিরীহ মানুষ, যাদের মধ্যে রয়েছে শিশুরাও। এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে উপত্যকা জুড়ে।

গত ৭ই মে, কাশ্মীর উপত্যকার পুঞ্চ জেলার সুখা কাথা অঞ্চলে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। ভারতীয় সীমান্তের কাছে অবস্থিত এই গ্রামে পাকিস্তানি গোলার আঘাতে নিহত হয় ৫ বছর বয়সী মারিয়াম। ছোট্ট মারিয়ামের বাবা জাভেদ ইকবাল, মেয়ের ছবি দেখিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “আমার বুকটা ফেটে যায়, যখন মনে হয় আমার চোখের সামনে ও কিভাবে মারা গেল।

শুধু মারিয়াম নয়, সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানি গোলার আঘাতে নিহত হয়েছে ১৩ বছর বয়সী ভিহান কুমার। পরিবারসহ নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময়, তাদের গাড়ির ওপর একটি গোলা এসে পড়লে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ভিহানের বাবা সঞ্জীব ভার্গব জানান, “ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে আমি দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম।

এছাড়া, একই দিনে পুঞ্চের একটি বাড়িতে গোলার আঘাতে নিহত হয় আরুশা খানের যমজ সন্তান – ১২ বছর বয়সী জাইন আলী এবং উর্বা ফাতেমা। মা আরুশা ও বাবা রমিজ খান গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আরুশার বোন মারিয়া পাঠান জানান, “ছেলে-মেয়ে দুটি তাদের বাবার কাছে সাহায্য চেয়েছিল, কিন্তু তাদের আর বাঁচানো যায়নি।

এই ঘটনার পর মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং বেসামরিক মানুষের ওপর এমন হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া বিষয়ক উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাংগুলি বলেন, “এ ধরনের হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল।

কাশ্মীর সীমান্তে প্রায়ই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উভয়পক্ষের সৈন্যদের মধ্যেকার এই লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। সেখানকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থানও বেসামরিক মানুষের জীবনহানির কারণ। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবস্থান উপত্যকার নিচে হওয়ায়, পাকিস্তানি সেনারা পাহাড়ের উপরে থেকে সহজেই তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শামিম গানাই বলেন, “গোলাগুলির কারণে সেখানকার মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ চলছে। এর আগে, ২০০৩ সালে দুই দেশের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা মাঝে মাঝে লঙ্ঘিত হলেও বহাল ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সীমান্তের পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *