পাকিস্তানের গ্রামে ষাঁড়ের লড়াই: শ্বাসরুদ্ধকর প্রতিযোগিতার সাক্ষী!

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে, বিশেষ করে আটোক জেলার একটি গ্রামে, ঐতিহ্যপূর্ণ ষাঁড়ের দৌড় প্রতিযোগিতা এক উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। খবর সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাল্লাল গ্রামে অনুষ্ঠিত এই দৌড় শুধু একটি খেলা নয়, এটি স্থানীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

প্রতি বছর, শত শত মানুষ এই আকর্ষণীয় দৃশ্য উপভোগ করতে জড়ো হয়। ষাঁড়ের গাড়োয়ানেরা কাঠের তৈরি একটি বিশেষ কাঠামোতে দাঁড়িয়ে থাকে এবং ষাঁড়দের দৌড়ের জন্য প্রস্তুত করে। দৌড় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাঠের ধুলা উড়িয়ে ষাঁড়গুলো ছুটে চলে, যা দর্শকদের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা যোগায়।

এই খেলার সঙ্গে জড়িত আছে গভীর ঐতিহ্য। স্থানীয় কৃষক এবং জমির মালিকরা এই প্রতিযোগিতার জন্য সারাবছর ষাঁড়দের লালন-পালন করে। বিজয়ী ষাঁড় গর্বের প্রতীক হয়ে ওঠে, এবং ভালো দামেও বিক্রি হয়। এই প্রতিযোগিতার সময় সেখানে বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান বসে, যেখানে ভাজা জিলাপি থেকে শুরু করে নানান মুখরোচক খাবার পাওয়া যায়।

প্রতিযোগিতার শুরুতে ষাঁড়গুলোকে সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয়, এরপর গাড়োয়ানরা তাদের আসনে আরোহণ করে। দৌড়ের সময়, ষাঁড়গুলো দ্রুত গতিতে ছুটে চলে, যা দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। অনেক সময় ষাঁড়গুলো গাড়োয়ানকে তাদের আসন থেকে ফেলে দেয়, তবে এটি এই খেলার একটি অংশ।

স্থানীয় বাসিন্দা সরদার হাবিব, যার পরিবার বহু বছর ধরে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে, তিনি বলেন, “এটা শুধু বিনোদন নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য। আমরা আমাদের পশুদের নিয়ে গর্বিত। এই প্রতিযোগিতার জন্য কৃষক এবং জমির মালিকরা তাদের ষাঁড়দের বিশেষভাবে প্রস্তুত করে।”

প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে অর্থ বিতরণ করা হয়, যা বিবাহ অনুষ্ঠানে অর্থ ছিটানোর মতোই একটি আনন্দময় দৃশ্য তৈরি করে। এই সময়ে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যবসার সুযোগ পায়।

এবারের প্রতিযোগিতায় একশর বেশি ষাঁড় অংশ নেয়, যেখানে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন এসেছিল। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন কৃষক মোহাম্মদ রমজান। তিনি বলেন, “আমার ষাঁড় পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে, এতে আমি খুবই আনন্দিত। সে ৯৫ জনকে পেছনে ফেলেছে।”

সংবাদ সংস্থা এপি’র তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনের ষাঁড়ের দৌড় পাকিস্তানের গ্রামীণ জীবনে আনন্দ ও উৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *