যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আত্মসমর্পণকারী সৈন্যদের হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি, সৈন্যদের হত্যার নির্দেশ সংক্রান্ত অডিও ক্লিপ এবং ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, রুশ সামরিক কর্মকর্তাদের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে রুশ সৈন্যদের সন্দেহভাজন মৃত্যুদণ্ডের একটি ঘটনা ঘটে। ড্রোন ফুটেজে দেখা যায়, ছয়জন সৈন্যকে মাটিতে উপুড় করে শোয়ানো হয়েছে এবং তাদের মধ্যে অন্তত দুজনকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হচ্ছে।
এছাড়া, আরও একজনকে সেখান থেকে সরিয়ে নিতেও দেখা যায়।
ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, তারা রুশ সেনাদের মধ্যেকার কথোপকথনও রেকর্ড করেছে। যেখানে শোনা যাচ্ছে, একজন কমান্ডার সৈন্যদের আত্মসমর্পণকারী সেনাদের হত্যা করার নির্দেশ দিচ্ছেন।
অডিও ক্লিপে ওই কমান্ডারকে বলতে শোনা যায়, “কমান্ডারকে বন্দী করো, আর বাকিদের শেষ করে দাও।”
যদিও রাশিয়া বরাবরই তাদের সৈন্যদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আচরণ করার দাবি জানিয়েছে, তবুও জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, এই অডিও ক্লিপ ও ড্রোন ফুটেজগুলো বিশ্বাসযোগ্য।
জাতিসংঘের একজন বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার, মরিস টিডবল-বিনজ বলেছেন, এই ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং সম্ভবত রাশিয়ার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমেই ঘটছে।
ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত ২৬৮ জন ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীকে হত্যার অভিযোগে ৭৫টি ফৌজদারি তদন্ত শুরু করেছে।
তাদের মতে, ২০২২ সালে আটটি ঘটনায় আটজন, ২০২৩ সালে আটটি ঘটনায় ১১ জন এবং ২০২৪ সালে (মে মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত) ৩৯টি ঘটনায় ১৪৯ জন সৈন্যকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে একটি হলো, যুদ্ধবন্দীদের দেখাশোনার জটিলতা এড়িয়ে যাওয়া।
এছাড়া, সৈন্যদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্যও এমনটা করা হতে পারে।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এমন কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত এবং এর সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন