পানামা খালের জন্য জমি হারাচ্ছে স্থানীয়রা: কান্না ও প্রতিরোধের ঢেউ!

পানামা খালের জন্য জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা, বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয় বাসিন্দারা।

বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ হলো পানামা খাল। আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী এই গুরুত্বপূর্ণ জলপথটি পানামার অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখে।

কিন্তু সম্প্রতি, খালের জল সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি নতুন জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। খবর অনুযায়ী, এই প্রকল্পের কারণে কয়েক হাজার মানুষকে তাদের বাসস্থান ছাড়তে হতে পারে।

ইন্দিও নদীর তীরে প্রস্তাবিত এই জলাধারটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ (এসিপি)। কর্তৃপক্ষ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং খালের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতেই এই জলাধার নির্মাণ করা জরুরি। তাদের মতে, এটি ভবিষ্যতের জন্য পানির নিশ্চয়তা দেবে।

জলাধারটি প্রায় ৪,৬০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হবে এবং একটি সুড়ঙ্গের মাধ্যমে এটি বিদ্যমান একটি লেকের সঙ্গে যুক্ত হবে। এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হবে, যার মধ্যে ক্ষতিপূরণ এবং স্থানান্তরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে, স্থানীয় বাসিন্দারা এই প্রকল্পের তীব্র বিরোধিতা করছেন। তাদের আশঙ্কা, জলাধার নির্মাণের ফলে তারা তাদের বাড়িঘর ও জীবিকা হারাবেন।

স্থানীয় মাগদালেনা মার্তিনেজ জানিয়েছেন, তিনি ইন্দিও নদীর পাশে একটি কাঠের বাড়িতে বসবাস করেন এবং তার পরিবারের সদস্যরা যুগ যুগ ধরে এখানে বসবাস করছেন। তাদের প্রধান জীবিকা হলো কৃষি ও পশুপালন।

এই প্রকল্পের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় তারা এখন দিশেহারা। গ্রামবাসীরা মনে করেন, বিশ্ব অর্থনীতির স্বার্থে তাদের জীবন উৎসর্গ করা হচ্ছে।

ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা ইতোমধ্যে প্রতিবাদ শুরু করেছেন। তারা নৌকায় করে নদীতে নেমে বিক্ষোভ করেছেন এবং কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের কারণে প্রায় আড়াই হাজার থেকে বারো হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। স্থানীয় সুশীল সমাজ এই সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং পরিবেশের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছে।

পানামা খালের গুরুত্ব বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ বলছে, জলাধার নির্মাণ না করলে ভবিষ্যতে খালের কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসার কথা জানিয়েছে।

এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। একদিকে যেমন খালের গুরুত্ব, অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন—সবকিছু মিলিয়ে বিষয়টি বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *