হার না মানা: জাফার পানাহির নতুন ছবি, বন্ধুদের হতাশাকে জয়!

ইরানের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা জাফর পানাহি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ফিরে এসেছেন, দীর্ঘ বাইশ বছর পর। তাঁর নতুন ছবি ‘এ সিম্পল অ্যাক্সিডেন্ট’-এর প্রিমিয়ারের জন্য তিনি কান-এ উপস্থিত হয়েছিলেন।

এই চলচ্চিত্রটি তাঁর মুক্তি পাওয়া সর্বশেষ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর আগে, ২০১৬ সালে তিনি ইরানের কারাগারে বন্দী ছিলেন এবং তাঁর সিনেমাগুলো ইরানে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

কানের মঞ্চে ফিরে আসা প্রসঙ্গে পানাহি বলেন, “আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুরাও আশা হারিয়ে ফেলেছিল যে আমি আবার ছবি বানাতে পারব।”

জাফর পানাহি একজন শিল্পী, যিনি সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন তাঁর কাজের মাধ্যমে। তাঁর সিনেমাগুলোতে সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং মানুষের অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়।

এর ফলস্বরূপ, তাঁকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে, তাঁর ছবিগুলো নিষিদ্ধ হয়েছে, এবং মিডিয়াতে কথা বলার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

পানাহির কারাজীবনের অভিজ্ঞতা তাঁর নতুন ছবি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি জানিয়েছেন, কারাগারে অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীদের সঙ্গে কাটানো সময় তাঁকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।

তাঁদের অভিজ্ঞতা, তাঁদের কথা, তাঁকে নতুন করে সিনেমা বানানোর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তাঁর কথায়, “আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমি তো আর কিছুই করতে পারি না… আমি একটি বাল্ব বদলাতে পারি না, স্ক্রু ড্রাইভারও ধরতে পারি না।

সিনেমা বানানো ছাড়া আর কিছুই তো আমি জানি না।”

‘এ সিম্পল অ্যাক্সিডেন্ট’ ছবিটি একটি গাড়ির দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। ছবিটিতে রাষ্ট্রের নিপীড়ন এবং প্রতিশোধের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

সমালোচকদের মতে, এটি পানাহির আগের ছবিগুলোর চেয়ে অনেক বেশি আবেগপূর্ণ। ছবিটি নির্মাণ করেছেন ফরাসি প্রযোজনা সংস্থা ‘লে ফিল্মস পেলেয়াজ’।

ছবিটির শুটিং হয়েছে ইরানে এবং সম্পাদনার কাজ করা হয়েছে ফ্রান্সে।

জাফর পানাহি সবসময়ই তাঁর কাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, “আমি অন্যান্য ইরানির মতোই, আমি কোনো বিশেষ ব্যক্তি নই।

ইরানের নারীদের হিজাব ছাড়া বাইরে বের হওয়া নিষেধ, কিন্তু তাঁরা সেটা করেন। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু করছি না।

আমি কাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই ইরানে ফিরে যাব এবং নিজেকে জিজ্ঞাসা করব, আমার পরবর্তী সিনেমাটি কী হতে যাচ্ছে।”

জাফর পানাহির এই প্রত্যাবর্তন শুধু তাঁর নিজের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের শিল্পী এবং মুক্তচিন্তকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি প্রমাণ করে, প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শিল্প তার পথ খুঁজে নেয়।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *