গাজায় মানবিক বিপর্যয়: দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ফিলিস্তিনিরা, সাহায্য পৌঁছানোয় ইসরায়েলের গড়িমসি।
গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য খাদ্য ও জরুরি ত্রাণ সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ইসরায়েল সেখানে অবরোধ সৃষ্টি করে রেখেছে, যার ফলে সেখানকার মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় পাঁচ লক্ষ ফিলিস্তিনি—অর্থাৎ প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন—খাদ্যাভাবে ভুগছে। এদের মধ্যে ১৪,০০০ শিশু মারাত্মক অপুষ্টির শিকার হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে।
সংবাদ সংস্থা আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েল সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে তারা গাজায় ত্রাণ সরবরাহ করতে দেবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত মাত্র ৫টি ত্রাণবাহী ট্রাক সেখানে প্রবেশ করতে পেরেছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিসের (ওসিএইচএ) মুখপাত্র জেন্স লারকে জানিয়েছেন, যে সামান্য ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে, তাও বিতরণে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা (আইপিসি)-এর সতর্কবার্তা অনুযায়ী, গাজায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে যে কোনো সময় আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হতে পারে।
দুর্ভিক্ষের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে সংস্থাটি জানায়, যদি কোনো অঞ্চলের অন্তত ২০ শতাংশ পরিবারের খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করে, ৩০ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভোগে এবং প্রতি ১০,০০০ জনে ২ থেকে ৪ জন অথবা শিশুদের মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়, তবে তাকে দুর্ভিক্ষ হিসেবে গণ্য করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, ইসরায়েলের অবরোধ শুরুর পর থেকে গত ২ মার্চ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৭ জন শিশু অপুষ্টির কারণে মারা গেছে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)-এর গাজার জরুরি সমন্বয়কারী পাসকাল কোইসার্ড ত্রাণ সরবরাহের এই পরিমাণকে ‘হাস্যকরভাবে অপ্রতুল’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এমএসএফের মতে, ইসরায়েল কার্যত অবরোধ জারি রেখে শুধুমাত্র কিছু খাদ্য ও ঔষধ সরবরাহ করে ‘ধোঁকাবাজি’ করছে, যাতে তাদের বিরুদ্ধে গাজাবাসীকে অনাহারে রাখার অভিযোগ না ওঠে।
আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডার মতো দেশগুলো ত্রাণ সরবরাহ করতে না দিলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে।
এমনকি ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও স্বীকার করেছে যে, দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রবেশ করছে না।
এদিকে, গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলি হামলায় বহু ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৫০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে।
গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর থেকে নিহত হয়েছেন ৩,৫০০ জনের বেশি।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহের বিষয়ে ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও মতভেদ দেখা যাচ্ছে।
দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভীর ত্রাণ পাঠানোর সিদ্ধান্তকে ‘গুরুতর ভুল’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, বিশ্ব যেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ না আনে, সেজন্য তারা ‘ন্যূনতম প্রয়োজনীয়’ ত্রাণ সরবরাহ করতে দেবেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা