সাবউফার ম্যাসাজ! শরীরের গভীরে কাঁপন ধরানো এক প্রদর্শনী!

শব্দের জগৎ: কিভাবে শব্দ আমাদের শরীরে নাচন ধরায়?

লন্ডনের বারবিকান সেন্টারে ‘ফিল দ্য সাউন্ড’ নামে একটি নতুন প্রদর্শনী শুরু হয়েছে, যেখানে শব্দ কিভাবে আমাদের শরীর ও মনের উপর প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে নানান দিক তুলে ধরা হয়েছে। শব্দ যে শুধু শোনার বিষয় নয়, বরং এটি আমাদের শরীরের প্রতিটি কণিকায় কম্পন সৃষ্টি করতে পারে, সে ধারণাই এই প্রদর্শনীর মূল বিষয়।

এই প্রদর্শনীতে এমন কিছু ব্যবস্থা রয়েছে যা দর্শকদের ভিন্ন উপায়ে শব্দ অনুভব করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে ভাইব্রেশন বা কম্পনের মাধ্যমে শব্দ অনুভব করা, স্পর্শের মাধ্যমে অনুভূতির সৃষ্টি এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে দৃশ্যমান করার ব্যবস্থা। শব্দ-তরঙ্গ কিভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং আমাদের অনুভূতিকে প্রভাবিত করে, তা এখানে বিভিন্ন শিল্পকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

প্রদর্শনীতে আসা দর্শনার্থীরা শিল্পী ইভান ইফেকোয়ার ‘রেজোনেন্ট ফ্রিকোয়েন্সি’ নামক একটি বিশেষ পরিবেশনার অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন। এখানে তারা একটি ভাইব্রেটিং স্টেজে বসে বা শুয়ে শব্দ শুনতে পারবেন এবং এর শারীরিক প্রভাব অনুভব করতে পারবেন। এছাড়াও, জলের মধ্যে শব্দের প্রভাবও দেখা যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের শব্দ আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। যেমন, ৫২৮ হার্জ কম্পাঙ্কের শব্দকে ভালোবাসার কম্পাঙ্ক হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। তাদের মতে, এই কম্পাঙ্ক শরীরের কোষের স্তরে পরিবর্তন আনতে পারে। এছাড়া ১৭৪ হার্জ কম্পাঙ্কের শব্দ শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর পুনর্গঠন ও মেরামতের সহায়ক হতে পারে।

প্রদর্শনীতে আরও রয়েছে, জন সেন্ট ওনারের ‘ভাইব্রাসেপশনাল প্লেট’ যেখানে দর্শনার্থীরা তাদের শরীরের অনুরণন পরীক্ষা করতে পারবেন। এছাড়াও, শ্রুতি প্রতিবন্ধী পারকাশনিস্ট ডেম ইভলিন গ্লিনি’র একটি চলচ্চিত্র রয়েছে, যেখানে তিনি আমাদের ভেতরের ছন্দ এবং শব্দ শোনার অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন। ম্যাক্স কুপারের ‘রিফ্লেকশনস অফ বিং’ নামক একটি অংশে দর্শকরা বিশেষ বেঞ্চের মাধ্যমে শরীরে কম্পন অনুভব করতে পারবেন, যা অনেকটা “ফুল বডি ম্যাসাজ”-এর মতো।

মনোবিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানীরা বলছেন, শব্দ আমাদের আবেগ এবং অনুভূতির উপর গভীর প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের হৃদস্পন্দন সঙ্গীতের তালে তাল মেলায়। এই প্রদর্শনীতে মানুষের শরীরের ভেতরের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে উপলব্ধি করার জন্য একটি ‘সেন্সিং স্টেশন’ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে দর্শনার্থীরা তাদের হৃদস্পন্দন, হৃদস্পন্দনের পরিবর্তন এবং ত্বকের প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করতে পারবেন।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, কম কম্পাঙ্কের শব্দ আমাদের শরীরে গভীর প্রভাব ফেলে, যা শারীরিক কষ্টের অনুভূতি কমাতে সাহায্য করতে পারে। বিড়াল যেমন আরাম পেলে শরীর থেকে শব্দ তৈরি করে, তেমনি এই ধরনের শব্দ আমাদের শরীরে শান্ত ও আরামের অনুভূতি যোগায়।

এই প্রদর্শনী শব্দের জগৎকে নতুনভাবে অনুভব করতে উৎসাহিত করে। শব্দ কিভাবে আমাদের শরীরের ভেতরের অনুভূতিগুলোকে প্রভাবিত করে, তা এখানে আসা দর্শকদের মধ্যে এক নতুন উপলব্ধির জন্ম দেয়।

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *