মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল ঋণ এবং এর সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ, যা বাংলাদেশকে প্রভাবিত করতে পারে। কোভিড-১৯ মহামারীর পরে, আমেরিকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে যখন, তখন দেশটির বিশাল ঋণের বোঝা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই ঋণ ভবিষ্যতে সংকট মোকাবিলায় দেশটির সক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার। এই বিশাল ঋণের কারণে বিভিন্ন খাতে সরকারের অর্থায়নেও সমস্যা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কোনো বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট আসে, তবে সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে আগের মতো ততটা সক্ষম নাও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই বিপুল পরিমাণ ঋণ দেশটির অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগের কারণ। ঋণ বাড়লে তা শুধু সরকারের সংকট তৈরি করবে না, বরং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়ও এর প্রভাব ফেলবে। যেমন, ঋণের কারণে সুদের হার বেড়ে যেতে পারে, যা বাড়ি নির্মাণ, গাড়ি কেনা অথবা ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের মতো বিষয়গুলোকে আরও কঠিন করে তুলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ-জিডিপি অনুপাত বর্তমানে ১২০ শতাংশের বেশি, যা ২০০৭ সালের অর্থনৈতিক মন্দার আগে ছিল প্রায় ৬২ শতাংশ। উচ্চ সুদের হারের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে, ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিও বাধাগ্রস্ত হবে। এমনকি শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতেও অর্থ বরাদ্দ কমে যেতে পারে।
ঋণের বোঝা বাড়লে শেয়ার বাজারেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বন্ড মার্কেট এবং শেয়ার বাজারের অস্থিরতা অনেক মানুষের সঞ্চয়ে আঘাত হানতে পারে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, অতিরিক্ত ঋণের কারণে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে ঋণ সংকট দেখা দিতে পারে।
সম্প্রতি, একটি আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট রেটিং কমিয়েছে, যা দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ একটি ঋণগ্রহীতা দেশ, তবে ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে এই ঋণের বোঝা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তারা মনে করেন, রাজস্ব নীতিতে পরিবর্তন আনা এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো জরুরি। অন্যথায়, দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে জীবনযাত্রার মান কমে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির যেকোনো পরিবর্তন আমাদের দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলে। আমাদের উচিত, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং দেশের অর্থনৈতিক সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
তথ্য সূত্র: সিএনএন