যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে সংস্কৃতি ও মানবিক বিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা হয়েছে। এর ফলে দেশটির বিভিন্ন জাদুঘর, পাঠাগার, শিল্পকলা বিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্প এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসন সংস্কৃতি বিষয়ক কার্যক্রমের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। এর অংশ হিসেবে তারা কেনেডি সেন্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করে এবং ‘অগ্রহণযোগ্য আদর্শের’ অভিযোগে স্মিথসোনিয়ান-এর মতো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের ওপরও হস্তক্ষেপ করে।
শুধু রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতেই নয়, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পরে। এর ফলস্বরূপ বোস্টনের আফ্রিকান আমেরিকান হিস্টোরি মিউজিয়ামের মতো বিভিন্ন জাদুঘর, পাঠাগার, আর্কাইভস প্রকল্প, শিল্পকলা বিষয়ক কর্মসূচি এবং চলচ্চিত্র উৎসবগুলো ফেডারেল অনুদান হারায়।
বোস্টনের আফ্রিকান আমেরিকান হিস্টোরি মিউজিয়ামের পরিচালক ড. নয়েল ট্রেন্ট জানান, তাদের জাদুঘরটি শিশুদের জন্য ইতিহাস বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কারণে তাদের সেই কর্মসূচিগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এক চিঠিতে প্রশাসন জানায়, এই ধরনের প্রকল্পে অর্থায়ন ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী’।
আর্ট বিষয়ক কর্মীদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের কারণে শিশুদের জন্য পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ওমাহা কনজারভেটরি অফ মিউজিকের সঙ্গীত শিক্ষা বিষয়ক প্রোগ্রাম ‘স্ট্রিং স্প্রাউটস’ এক দশক ধরে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর দ্য আর্টস (NEA) থেকে অনুদান পাচ্ছিল।
কিন্তু এখন সম্ভবত তাদের ক্লাস সংখ্যা কমাতে হতে পারে। এছাড়াও নিউইয়র্কের ‘অপেরা অন ট্যাপ’-এর ‘প্লেগ্রাউন্ড অপেরা’ প্রোগ্রাম, যা কম আয়ের মানুষের শিশুদের মধ্যে পারফর্মেন্সের সুযোগ তৈরি করে, সেটিও ফেডারেল সহায়তা ছাড়া পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রক্ষণশীল গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, শিল্পকলা ও মানবিক বিষয়ক প্রোগ্রামগুলো করদাতাদের অর্থ পাওয়া উচিত নয়, কারণ তাদের ব্যক্তিগত উৎস থেকে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল ফান্ডকে তাদের পছন্দের সাংস্কৃতিক উদ্যোগের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। বাতিল হওয়া ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর দ্য হিউম্যানিটিজ (NEH)-এর কিছু অর্থ ‘ন্যাশনাল গার্ডেন অফ হিরোস’ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হবে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমেরিকার অতীতের ২৫০ জন মহান ব্যক্তির সম্মানে একটি ভাস্কর্য উদ্যান তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ইতিহাস বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের ওপর কাজ করা একটি অলাভজনক সংস্থা ন্যাশনাল হিস্টোরি ডে-এর নির্বাহী পরিচালক ক্যাথি গর্ন জানান, ফেডারেল সহায়তা কমে গেলে তাদের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কমে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “শিশুরা যখন ইতিহাস ভালোভাবে অধ্যয়ন করে, তখন তারা সহানুভূতি শিখতে পারে। আমাদের এই মুহূর্তে সেই শিক্ষার খুব বেশি প্রয়োজন। তাই এই সুযোগ হারানো আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি সংকট।”
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। অনেক সংস্থা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে অর্থ সংকটে পড়েছে।
তবে কিছু সংস্থা ব্যক্তিগত অনুদান এবং অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন