ব্রিটিশ পুলিশের গুপ্তচরবৃত্তি: ভালোবাসার নামে গভীর প্রতারণা।
ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং গোপনতা – এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি ঘটনার সাক্ষী থেকেছে বিশ্ব। ব্রিটেনের একজন নারীর সঙ্গে এক পুলিশ অফিসারের সম্পর্ক, যা আদতে ছিল গভীর এক প্রতারণার জাল।
ঘটনাটি শুধু একটি ব্যক্তিগত সম্পর্কের গল্প নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি ভয়ানক দৃষ্টান্ত।
কেট উইলসন নামের এক তরুণীর সঙ্গে ‘মার্ক স্টোন’ ছদ্মনামে পরিচয় হয় মার্ক কেনেডি নামের এক ব্যক্তির। কেনেডি ছিলেন আসলে একজন আন্ডারকাভার পুলিশ অফিসার, যিনি পরিবেশবাদী একটি গোষ্ঠীর কার্যকলাপের ওপর নজর রাখতেন।
২০০৩ সালের শেষের দিকে উইলসন ও কেনেডির মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
উপহার বিনিময়, একসঙ্গে সময় কাটানো, এমনকি পরিবারের সঙ্গেও সময় কাটাতেন তারা। কিন্তু উইলসনের অজান্তে, কেনেডি তার প্রতিটি পদক্ষেপের খবর সরবরাহ করতেন পুলিশের কাছে।
ভালোবাসার নামে, সম্পর্কের নামে দিনের পর দিন চলছিল এই ভয়ঙ্কর প্রতারণা।
তাদের সম্পর্কের ১৬ মাস পর, ২০০৫ সালে উইলসন স্পেনে চলে যান।
এর পাঁচ বছর পর, ২০১০ সালে তিনি জানতে পারেন, মার্ক স্টোন নামের মানুষটি আসলে পুলিশ অফিসার মার্ক কেনেডি। শুধু তাই নয়, তিনি বিবাহিত এবং তার সন্তানও রয়েছে।
এই খবর জানার পর উইলসন সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “আমি যেন আমার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু থেকে ছিটকে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল আমি অন্য কারও গুপ্তচরবৃত্তির গল্পের একটি চরিত্র।”
এই ঘটনার পর উইলসন ন্যায়বিচারের জন্য আইনি লড়াই শুরু করেন। তিনি উপলব্ধি করেন, কিভাবে রাষ্ট্রের ক্ষমতা ব্যবহার করে একজন সাধারণ মানুষের জীবনকে তছনছ করে দেওয়া যায়।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চলা আইনি লড়াইয়ে ব্রিটিশ পুলিশকে তাদের গোপন নথি প্রকাশ করতে বাধ্য করা হয়। সেই নথিতে কেনেডির কার্যক্রমের বিস্তারিত বিবরণ ছিল।
জানা যায়, কেনেডি শুধুমাত্র উইলসন নন, আরও অনেক নারীর সঙ্গে একই ধরনের সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। যাদের তিনি ভালোবাসার অভিনয় করে দিনের পর দিন প্রতারণা করেছেন।
উইলসনের এই লড়াইয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি সামনে আসে। ব্রিটিশ সরকারের গোপন নজরদারির বিষয়টিও উন্মোচিত হয়।
আদালত এক রায়ে জানায়, পুলিশ এখানে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে এবং এটি ছিল একটি বেআইনি কাজ। ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে অবশেষে এই মামলার নিষ্পত্তি হয়।
এই ঘটনা আমাদের সমাজে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং গোপনীয়তার গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। একইসঙ্গে, রাষ্ট্রের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে।
উইলসনের জীবনের এই অভিজ্ঞতা, ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।